ঢাকার সাত মসজিদ সড়কে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষের যাতায়াত। সমতলে রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা না থাকা, ফুটপাতে অবৈধ পার্কিং, আবর্জনা, সুনির্দিষ্ট বাস ষ্টপের অভাব, সর্বপরি পথচারীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ না থাকায় প্রতিনিয়ত তারা নানবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। অথচ স্বল্প খরচে সামান্য অবকাঠামো পরিবর্তনের মাধ্যমে সড়কটি প্রাণবন্ত ও নিরাপদ করে গড়ে তোলা সম্ভব। এজন্য বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউন্সিলরদের অধীনে আলাদা একটি কার্যকর বিভাগের মাধ্যমে এই পরিবর্তন সাধন করা সম্ভব। এর ফলে পথচারীর নিরাপত্তা, যাতায়াত, সকলের প্রশেগম্যতা, প্রয়োজনীয় সুবিধাদি (টয়লেট, বসার স্থান, ছাউনি ইত্যাদি) সর্বপরি এলাকাবাসীর সুস্বাস্থ্য এবং বাসযোগ্য পরিবেশ উভয়ই নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ২৮ মার্চ ২০১৭, সকাল ১১.০০ টায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ল এন্ড ইন্টারন্যাশনাল এ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া) সেন্টারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে “সাত মসজিদ রোডে পথচারীবান্ধব পরিবেশ তৈরি: আমাদের প্রস্তাব” বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের কতিপয় শিক্ষার্থী ‘সাত মসজিদ রোডকে পথচারীবান্ধব করে গড়ে তোলার নকশা এবং পরিকল্পনা’ শিরোনামে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। গবেষণার সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরে বুয়েটের শিক্ষার্থী মোঃ জিসান আহমেদ এবং নওশিন তাবাস্সুম বলেন, পথচারী সহায়ক উপকরণের অভাব, যান্ত্রিকযানের প্রাধান্য, নীতিমালা প্রয়োগে দূর্বলতা সাত মসজিদ সড়ক পথচারীবান্ধব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকলের ব্যবহার উপযোগী ফুটপাত, সমতলে রাস্তা পারাপার, সুনির্দিষ্ট বাস ষ্টপ এবং হকার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান সম্ভব। এজন্য পৃথক একটি কার্যকর বিভাগের মাধ্যমে তদারকির ব্যবস্থা করার সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, সকলের মাঝেই পথচারীদের প্রাধান্য না দেবার মানসিকতা লক্ষ্য করা যায়। এ কারণে যে কোন নীতিমালা এবং পরিকল্পনায় পথচারীরা উপেক্ষিত থেকে যায়। পথচারীদের জন্য নিরাপদ এবং স্বচ্ছন্দ পরিবেশ সৃষ্টিতে সিটি কর্পোরেশনকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্স এর সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, শহরের গতিশীলতার মূলে হলো পথচারীরা। কাজেই তাদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতকরণে একটি সুশৃঙ্খল শাসন ব্যবস্থা প্রণয়ন করা আবশ্যক। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুসলেহ উদ্দিন হাসান বলেন, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে স্বল্প দূরত্বে যান্ত্রিক বাহনের চেয়ে হেঁটেই আগে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব।
পথচারীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে পৃথক বিভাগ হলে এর জন্য সুনির্দিষ্ট বাজেট এবং লোকবল থাকবে। তখন পথচারী সহায়ক কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিদুল হক খান বলেন, আমাদের নীতিমালাগুলোতে পথচারী উপেক্ষিত। এলাকাভিত্তিক জনপ্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে এলাকার পথচারী, বাস ষ্টপ এবং হকার ব্যবস্থাপনা করতে হবে। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, হাঁটার পরিবেশের ভালো হলে স্বল্প দূরত্বে মানুষ হাঁটতে উৎসাহিত হবে। ফুটপাতে হকার ব্যবস্থাপনা জরুরী। কারণ তারা প্রয়োজনীয় পণ্য সুলভ মূল্যে বিক্রির পাশাপাশি নিরাপত্তাও নিশ্চিত করেন।
মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে ইনস্টিটিউট অফ আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ এর উপদেষ্টা স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ৫৪ টি প্রতিষ্ঠান এবং ৭ টি মন্ত্রণালয় ঢাকা শহর পরিচালনা করছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। সকল প্রতিষ্ঠান এবং মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়কারী হিসাবে মেয়রকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ঢাকা শহরে সকল প্রয়োজনীয় জিনিস সাড়ে তিন কি.মি. দূরত্বের মধ্যে রয়েছে। কাজেই পরিকল্পনায় যান্ত্রিক যান বান্ধব পরিকল্পনা যেমন ফ্লাইওভার না করে হাঁটার পরিবেশ ভালো করা , গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়ন করা প্রয়োজন।
মতবিনিময় সভায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন এর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট এর সদস্য সচিব আমিনুর রসুল, তরঙ্গ প্লাস বাসের পরিচালক কাজী বোরহান উদ্দিন, জনস্বাস্থ্য ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ডিএম সাকলাইন এবং সুজন এর বংশাল শাখার প্রচার সম্পাদক ক্যামেলিয়া চৌধুরী প্রমুখ।