এক সময় ঢাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত ছিল। যার মূলে ছিল শহরের অভ্যন্তরে বয়ে চলা শতাধিক খাল। যেগুলি নগরীর চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা, শীতালক্ষা, তুরাগ ও বালু নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। এই প্রাকৃতিক সুবিধাই মুঘলদের ঢাকায় রাজধানী প্রতিষ্ঠা করতে আকর্ষণ করে। এই খালগুলো দিয়ে শহরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করা যেত। স্বাভাবিক কারণেই পরবর্তী সময়ে এই এলাকায় নৌপথের মাধ্যমেই মালামাল পরিবহন ও বাণিজ্যিক প্রসার ঘটতে থাকে। সেই সময়ের যোগাযোগ প্রধানত নৌ পরিবহন ব্যবস্থার উপরই নির্ভরশীল ছিল। ঢাকা শহরের খাল দিয়ে নৌকা, স্টিমার নিয়ে অলিগলিতে চলাচল করা যেত। বর্হিশত্রুর আক্রমণ থেকে রাজপ্রসাদ, দুর্গ ও রাজধানী রক্ষাসহ রণকৌশল নির্ধারণেও নদী ও খালের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রচলিত উন্নয়নের নামে অধিকাংশ খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। আজ অবশিষ্টগুলিও সঙ্কটাপন্ন । যেসব খাল দিয়ে এক সময় স্টিমার চলতো এখন সেখান দিয়ে নৌকাও চলে না। খালের সঙ্গে নদীর যে যোগাযোগ ছিল সেটি আজ বিচ্ছিন্ন । খালের পানি এখন আর নদীতে গড়ায় না। খালগুলি হারানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে জলাবদ্ধতা, পানি সঙ্কট, তাপমাত্রা এবং হ্রাস পাচ্ছে মৎস সম্পদ ও জীববৈচিত্র। আমাদের নানা অদূরদর্শী কর্মকান্ড এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
খালগুলি ভরাট করে ভবন, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও ড্রেন বানানো হয়েছে। ঢাকার কোন কোন খাল সকলের চোখের সামনেই সরাসরি আবার কোনটি আবর্জনা ফেলার মাধ্যমে ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। মূলত স্বাধীনতার পর নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ঢাকা শহরের পরিধি ও জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সাথে নদী, খাল ও জলাশয় ভরাট হতে থাকে। যার ফলাফল হিসেবে নব্বই সালের পর থেকে ঢাকায় জলাবদ্ধতা সঙ্কট প্রকটতর হচ্ছে। নগরীতে অবস্থিত খাল ও জলাশয় ভরাট হওয়াই এই জলাবদ্ধতার মূল কারণ। ঢাকা শহরে এখন সামান্য বৃষ্টিতেই ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। যে কারণে জনজীবনে নেমে আসে চরম বিপর্যয়।