বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে আমাদের দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশে চাষকৃত সবজির সংখ্যা প্রায় ৯০টি, যার মধ্যে ৩০-৩৫টি প্রধান সবজি হিসেবে গণ্য করা হয়। সবজি উৎপাদনে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। সঠিক সময়ে কীটনাশক প্রয়োগ ও প্রয়োগমাত্রা সম্পর্কে ধারণা না থাকায় নিরাপদ সবজি নিশ্চিত হয় না। অন্যদিকে খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহার হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পলিথিন এবং বিভিন্ন রকমের প্রিজারভেটিভ।
অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে জনস্বাস্থ্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্যখাতে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। দূষিত হচ্ছে বায়ু। প্রাথমিকভাবে অধিক ফলন প্রদান করলেও এ ধরণের চাষ ব্যবস্থায় ধীরে ধীরে জমির ফলন হারিয়ে যাবে এবং কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সর্বোপরি, অনিরাপদ চাষ জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশের উর্বর মাটি ও জলবায়ু সবজি চাষের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক। উন্নত ও সুস্থ সবল বীজ, সঠিক পরিচর্যা ও জৈব প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে প্রায় সব ধরণের মাটিতেই নিরাপদ সবজি উৎপাদন করা যেতে পারে। তাই জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের দিকে নজর দেয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ঢাকা নগরবাসীর জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের আওতায় ঢাকা শহরে এলাকাভিত্তিক কৃষকের বাজার স্থাপন শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। যার অধীনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ৬টি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ৬টি, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে ২টি এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে ২টি কৃষকের বাজার স্থাপিত হয়েছে এবং গাজীপুর জেলার পাজুলিয়া ও গুটিয়া, নারায়ণগঞ্জের ভক্তাবলী, কেরানিগঞ্জের কলাতিয়া ও হযরতপুর এবং সাভার উপজেলার বিরুলিয়া, ভাকুর্তা ও তেতুলঝোড়া এলাকার ৪৮০ জন কৃষককে নিরাপদ চাষাবাদ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
নিরাপদ চাষাবাদ এমন একটি চাষাবাদ পদ্ধতি যেখানে রাসায়নিক সার এবং রাসায়নিক কীটনাশকের উপর নির্ভর না করে জৈব উপায়ে চাষ করা হয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট কর্তৃক যৌথভাবে প্রস্তুতকৃত এ প্রশিক্ষণ সহায়িকাটি ব্যবহারের মাধ্যমে সুস্থ সবল গাছ জন্মানো, জৈব কীটনাশকের প্রস্তুত প্রণালী, উত্তম কৃষি চর্চা, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা, ফসল সংগ্রহ পরবর্তী পরিচর্যা, স্বাস্থ্যবিধি ইত্যাদি সম্পর্কে একদিনের একটি প্রশিক্ষণ কৃষকদের প্রদান করা হবে। প্রশিক্ষণ সহায়িকাটি জমি নির্বাচন থেকে শুরু করে ফসল উৎপাদন পর্যন্ত উত্তম কৃষি চর্চা, কোনো ধরনের রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার না করে কিভাবে জৈব উপায়ে পোকা দমন করা যায় এবং কৃষক নিজে শারীরিক ভাবে সুস্থ থেকে ভোক্তাদের কাছে নিরাপদ খাবার পৌঁছে দিতে পারেন সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। নিরাপদ চাষাবাদের উদ্যোগ আরো ব্যাপক আকারে গ্রহণ করা হলে সমগ্র দেশবাসী উপকৃত হবেন এবং দেশে ও দেশের বাইরে নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
Download Bangla Manual