বাংলাদেশে সুপেয় পানির অফুরন্ত সম্ভাবনা নদীনালা, খাল-বিল, পুকুরসহ সবরকম জলাশয় দখল ও দূষণের কারণে পানির আধার ধ্বংস হয়ে পানি সঙ্কট বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া জলাশয় দখল ও দূষণের শিকার হওয়ায় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। পানির উত্স দখল ও দূষণ রোধসহ পরিবেশ উন্নয়নে সবাই যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখলেই জলাধার দূষণ ও দখল রোধ করা সম্ভব।
মঙ্গলবার পরিবেশ অধিদপ্তরের চামেলী সভা কক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. গোলাম রব্বানীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-র পরিচালক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (পানি ও জৈব) ড. মু. সোহরাব আলি। আলোচনা করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন পরিচালক (আইন) জাফর সিদ্দিক।
প্রবন্ধে এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, পানি সঙ্কট মোকাবিলা ও পানির যোগান নিশ্চিত করতে সকল প্রকার পানির উত্স নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয়ের দূষণ প্রতিরোধ ও ভরাট বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। পানির চাহিদা মিটাতে বর্তমানে ঢাকা শহরে ৮৩% ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহূত হচ্ছে। এছাড়া বৃষ্টিহীনতা এবং খরার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া এবং নদী-নালা, খাল-বিল ও জলাশয় দূষণ, ভরাট এবং নদী তীরবর্তী এলাকা দখল হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রিচার্জ হচ্ছে না। পানির স্তর ভয়াবহ পরিমাণে নেমে যাওয়ায় শুকনো মৌসুমে আমাদের দেশে সেচের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় না। শহরের অধিকাংশ স্থানে ইট, বালু, সিমেন্টের আস্তর ভূ-গর্ভস্থ পানি প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে। যা পানি সংকটকে বৃদ্ধি করছে।
প্রবন্ধে ড. মুঃ সোহরাব আলি বলেন, ১৩টি নদীর পানির মান পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীর পানির মান খুব খারাপ। শুষ্ক মৌসুমে কোন প্রাণই এখানে বাঁচতে পারবে না। এছাড়া কর্ণফুলী, বাকখালী, পশুর নদীও দূষিত। রূপসা, পশুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেশি। নদীর পানির মান রক্ষায় পয়ঃবর্জ্য, শিল্পবর্জ্য নিক্ষেপের মাধ্যমে দূষণ বন্ধ করতে হবে।
সেমিনারে বক্তারা পানির উত্স হিসেবে নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয় রক্ষা আইন বাস্তবায়ন; শিল্প-কারখানার, পয়ঃবর্জ্য এবং গৃহস্থালী বর্জ্য নদী বা জলাশয়ে ফেলা বন্ধ এবং শহর ও নগর এলাকায় নতুন করে পুকুর, জলাধার তৈরির সুপারিশ করেন। পাশাপাশি পরিবেশ আইনসহ পরিবেশ সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্ষমতা, সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে দায়বদ্ধ করে তুলতে হবে।
মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) এর পরিচালক ড. এ এফ এম আফজাল হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম আমানুল্লাহ, বিসিএইচআরডি'র নির্বাহী পরিচালক মো. মাহবুল হক, পীস এর মহাসচিব ইফমা হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব মিহির বিশ্বাস, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট এর সদস্য সচিব আমিনুর রসুল, বাপা সহ-সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, পরিবেশবিষয়ক অনলাইন সংবাদসংস্থা ইএনভিনিউজ এর নির্বাহী সম্পাদক তুষার চন্দন প্রমুখ।
Source: http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDRfMjRfMTNfMV82XzFfMzU3ODI=