English | Bangla
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপুষ্টি হ্রাসে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির দাবি

বিগত ২০ বছরে দেশে চাল, ডাল, তেল, লবনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু মরণঘাতি পণ্য বিড়ি-সিগারেটসহ তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়েনি। ফলে দেশে দরিদ্র জনগণসহ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ধূমপানের হার বেড়ে চলেছে। ২০০৯ সালে গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) এর পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশে ৪৩.৩% মানুষ (পুরুষ ও নারী) তামাক (বিড়ি-সিগারেট, জর্দা, গুল ইত্যাদি) ব্যবহার করেন। এর মধ্যে দরিদ্রদের (৫৫.৬%) ও নিরক্ষরদের (৬২.৯%) মধ্যে তামাক সেবনের হার বেশি। ২০০৪ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় বলা হয়েছে, ধূমপানসহ তামাক সেবনের কারনে বছরে দেশে ৫৭ হাজার মানুষ মারা যায় এবং ৩ লক্ষ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করে। ২০০৮ সালে এইচডিআরসি’র এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিড়ি-সিগারেটসহ তামাক খাত থেকে সরকার যে পরিমাণ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও রাজস্ব (ট্যাক্স) বাবদ যে পরিমাণ অর্থ পায় তার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি পরিমাণ অর্থ তামাকজনিত রোগে আক্রান্তদের স্বাস্থ্য সেবায় ব্যয় হয়।

২৬ এপ্রিল ২০১০ সকাল ১১ টায় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চরনিখলা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সিরাক-বাংলাদেশ ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট আয়োজিত এক অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তারা এসব কথা বলেন। বক্তারা আরও বলেন, সারা পৃথিবীতে তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যে কয়টি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়, তার মধ্যে করবৃদ্ধি অন্যতম। বিড়ি-সিগারেটের উপর কর বৃদ্ধি ঘটলে এসব তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়বে। দাম বাড়লে সেবনের হার কমবে। বিশ্ব ব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় বলা হয়েছে, ১০% মূল্য বৃদ্ধি ঘটলে দরিদ্র দেশগুলোতে ধূমপানের হার কমবে ৩৬ভাগ ও তামাকজনিত মৃত্যু কমবে ৯ভাগ এবং রাজস্ব বাড়বে। 

বক্তারা নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, দরিদ্র বিড়ি সেবনকারীরা প্রতিদিন গড়ে ৮ কোটি টাকা এবং প্রতিবছর প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে দেশে ৭২ লাখ অপুষ্ট শিশুর প্রত্যেককে এক গ্লাস দুধ অথবা ৫৩ লাখ অপুষ্ট শিশুর প্রত্যেককে এক গ্লাস দুধ ও একটি ডিম দেয়া সম্ভব, যা অপুষ্টিজনিত মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে। আন্তজার্তিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-র আর্টিকেল-৬ নং ধারায় তামাক ব্যবহার হ্রাসে কর বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। তাই অবস্থান কর্মসূচী থেকে সকল জনপ্রতিনিধিদের প্রতি জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতি রক্ষায় সকল তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি বিষয়ে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান জানানো হয়। 

অবস্থান কর্মসূচীতে সিরাক-বাংলাদেশ’র প্রোগ্রাম অফিসার মোঃ অলি আহাদ এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন প্রোগ্রাম অর্গানাইজার মোঃ বরকত ঊল্লাহ ভূঞা, মৃগালী সিরাক রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আয়াতুল্লাহ, দত্তপাড়া সিরাক রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুর্শিদুল আলম নোমান, উন্নয়নকর্মী মোঃ আব্দুস সাত্তার সহ উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক এবং উন্নয়ন সংগঠন, শিক্ষক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মসূচীতে অংশগ্রহন করেন। পরে একটি স্বাক্ষর গ্রহন কর্মসূচীতে উপজেলার ১০০ জন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ সকল প্রকার তামাকের উপর কর বৃদ্ধির জন্য দাবি জানিয়ে স্বাক্ষর প্রদান করেন।