রেলের বিদ্যমান সংকটগুলোর মধ্যে ইঞ্জিন ও বগির অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে অনেক রুটে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ট্রেন চালু করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে ইঞ্জিন-বগি নির্মাণ ও মেরামতের মাধ্যমে রেলওয়ের কারখানাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য দ্রুত রেল কারখানাগুলোকে আধুনিকায়ন ও সচল করা জরুরি হয়ে পড়েছে। গত ১৬ এপ্রিল ২০১৩, সকাল ১০.৩০টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘রেলের দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নে করণীয়: প্রেক্ষিত রেল কারখানা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ মত ব্যক্ত করা হয়।
সভায় রেল কারখানা পরিদর্শনমূলক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, বর্তমানে রেলওয়ের কারখানাগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত। জনবল সংকট, বাজেট বরাদ্দ ক্রমেই কমিয়ে দেয়া, পুরনো মেশিন, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের স্বল্পতা ইত্যাদি কারণে কারখানাগুলো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সেবা দিতে পারছে না। এজন্য মেরামত কাজ বাইরে থেকে করাতে বাধ্য হচ্ছে রেলওয়ে। ফলে প্রচুর অর্থ অপচয় হচ্ছে। অবস্থার পরিবর্তনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে কারখানাগুলো আধুনিকায়ন জরুরি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বাহন হওয়া সত্ত্বেও রেলের উন্নয়ন ঘটছে না। কারণ এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় রেল আক্রমণের শিকার হচ্ছে। দেশের স্বার্থে এ প্রবণতা বন্ধ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, রেলের স্থাবর সম্পত্তি (প্রধানত জমি) রক্ষণাবেক্ষণে দুর্বলতা রয়েছে। বেহাত হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার করতে হবে। গণমানুষের বাহন হিসেবে গড়ে তোলাসহ রেলের উন্নয়নে রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. শাহ আলম বলেন, রেলের দুর্নীতির উত্স খুঁজে বের করে তা দূর করতে হবে। রেলের দিকে সরকারের দৃষ্টি বাড়াতে সামাজিক আন্দোলন আরও জোরালো করতে হবে। রেলের উন্নয়ন মানে গণমানুষের উন্নয়ন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এম আনসার হোসেন বলেন, রেলওয়ে একই সঙ্গে শিল্প ও সেবাপ্রধান খাত। রেলে সরাসরি যেমন কর্মসংস্থান রয়েছে, তেমনি রেলনির্ভর অসংখ্য কর্মসংস্থান গড়ে ওঠে। এজন্য রেলের কারখানাগুলো আধুনিকায়ন জরুরি। এর মাধ্যমে রেলে কর্মসংস্থান বাড়বে। আবার রেলে যন্ত্রাংশ সরবরাহের জন্য বেশকিছু শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হবে। এক্ষেত্রেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দেশের বৃহত্ এ কর্মসংস্থান ক্ষেত্র রেলের উন্নয়নে বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পবা সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বলেন, সম্প্রতি রেলের ভাড়া বেড়েছে। তবু রেল এখনো সাশ্রয়ী। এছাড়া সব ধরনের গণপরিবহনের মধ্যে রেল জ্বালানিসাশ্রয়ী। রেলের মাধ্যমে ভূমির ব্যবহারও নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখা সম্ভব। এজন্য রেলকে আগামী বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন রেলওয়ের সাবেক কর্মকর্তা প্রকৌশলী কবির হোসেন, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, বাপা সদস্য ড. এমএ হাই, পবার সদস্য সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।