ঢাকা শহরে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে একজন পথচারী মারা যায় এবং পঙ্গুত্ব বরণ করেন অনেকেই। ঢাকার সড়ক যেন পথচারীর জন্য মৃত্যুফাঁদ। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩৭ শতাংশ প্রাইমারী ট্রিপ হেঁটে যাতায়াত হয়। এছাড়া যারা পাবলিক পরিবহনে (বাস, টেম্পু, রিকশা) যাতায়াত করেন এরাও একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব হাঁটেন। যাতায়াতের প্রায় প্রতিটি ট্রিপ এর শুরু এবং শেষ হয় হেঁটে। এজন্য বলা হয়, ঢাকার ৯৫ভাগ পথচারী। তাই ঢাকার ৯৫ভাগ মানুষের নিরাপদে হাঁটার পরিবেশের দাবি জানিয়েছে ১১টি বেসরকারি সংগঠন। ১৭ জুলাই ২০১২ সকাল ১১টায় শাহবাগস্থ চারুকলা ইনস্টিটিউট এর সামনে জমায়েত ও কফিন র্যালি শেষে টিএসসিতে আলোচনা পর্বে বক্তারা উপরোক্ত দাবি জানান। র্যালি ও সমাবেশে ঢাকায় দূর্ঘটনায় নিহত পথচারীদের প্রতীকী অর্থে ৩টি কফিন এর সাহায্যে তুলে ধরা হয়।
বক্তারা বলেন, পর্যাপ্ত ফুটপাত না থাকা ও তা ব্যবহার অনুপোযোগী হওয়ায় সড়কের পাশ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে পথচারীরা দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। সড়ক পারাপারের জন্যও সুব্যবস্থা না থাকায় পার হতে গিয়েও বেপরোয়া যানবাহনের আঘাতে অনেকেই দূর্ঘটনায় পতিত হচ্ছেন। ঢাকা শহরে বিদ্যমান ফুটপাতগুলো অসমান ও ভাঙাচোরা, একটু পরপরই উঠতে-নামতে হয়। ফুটপাথে প্রাইভেট গাড়ি পার্কিং, দোকানের মালামাল রাখা, পর্যাপ্ত আলো না থাকা, র্যাম্প না থাকা শারীরিক প্রতিবন্ধীসহ সকলের পক্ষেই চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। সড়ক পারাপারের জন্য পর্যাপ্ত জেব্রা ক্রসিং নেই, যেখানে আছে চালকেরা সিগন্যালে তার উপর গাড়ি রাখছে। বাংলাদেশ প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ প্রতিবন্ধী যাদের পক্ষে ফুটওভার ব্রিজ পার হওয়া সম্ভব নয়। নারী, শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ও মালামাল বহনকারী ব্যক্তির পক্ষেও ফুটওভার ব্রিজ পারাপারে জন্য সহায়ক নয়। অথচ পথচারীর নিরাপত্তার নামে ফুটওভার ব্রিজ বানানো হচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে শহরে সমতলে সড়ক পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ নয়, জেব্রা ক্রসিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, যানজট দূর করার নামে ঢাকায় প্রাইভেট কার ব্যবহারকারী ২ শতাংশ মানুষের সুবিধার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’র মত ব্যয়বহুল প্রকল্প নেয়া হয়। অথচ ৯৮ শতাংশ মানুষের নিরাপদে চলাচলের পরিবেশ গড়ে তুলতে কোন উদ্যোগ নেই। বিশেষ করে পথচারীদের নিরাপদে স্বচ্ছন্দে চলাচলের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে কোন পদক্ষেপ নেই।
যাতায়াত বিশেষজ্ঞ ড. এটিএম নুরুল আমিন বলেন, বিশ্বব্যাপী দ্রত নগরায়নে প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, মুটিয়ে যাওয়া ও অতিরিক্ত ওজনসহ অনেকগুলি কান্সার এর ঝুকি বাড়ছে। প্রতিদিন তিরিশ মিনিট থেকে এক ঘন্টা হাঁটলে এ সমস্ত রোগ উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিরোধ করা যায়। যাতায়াতের জন্য হাঁটলে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। ঢাকায় ৭৬ ভাগ যাতায়াত হয় ৫ কি.মি. এর মধ্যে, যার অর্ধেক আবার ২ কি.মি. এর কম। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এই দূরত্বে হেঁটেই যাতায়াত করা সম্ভব।
কর্মসূচি থেকে পথচারীবান্ধব নীতিমালা প্রণযন ও বাজেট বরাদ্দ করে নগরীতে নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে হাঁটার জন্য যান্ত্রিক যানের গতি নিয়ন্ত্রণ করা; শহরের অভ্যন্তরে প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণ করা, ফুটপাতের প্রতিবন্ধকতা দূর করা; নগরে সড়কে সর্বোচ্চ ২০০ মিটার পর পর জেব্রা ক্রসিং এর ব্যবস্থা করা; জেব্রা ক্রসিং এর পূর্বে গাড়ি থামানোর জন্য কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা; জেব্রা ক্রসিং এর পাশে সাইন বোর্ড-সিগন্যাল লাইট বসানো; পথচারীদের সড়ক পারাপারে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারে উৎসাহিত করার সুপারিশ করা হয়।
নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ) এর সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না এর সভাপতিত্বে কর্মসূচি পরিচালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসী অফিসার মারুফ রহমান। বক্তব্য রাখেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এর পরিবেশ বিজ্ঞান এর ডীন ড. এটিএম নূরুল আমিন, জাগরী এর বিধান চন্দ্র পাল, সমাজকর্মী একেএম সিরাজুল ইসলাম, প্রত্যাশা এর সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, গ্রীণ মাইন্ড সোসাইটি এর নির্বাহী পরিচালক আমির হাসান, অধ্যক্ষ কামাল আতাউর রহমান, আইএফপি এর নির্বাহী পরিচালক আরিফুর রহমান, বিসিএইচআরডি এর নির্বাহী পরিচালক মাহ্বুবুল আলম প্রমূখ।