অটিজম সংক্রান্ত বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের সকল মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ২০০৭ সালে ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- #Awareness – #Acceptance – #Appreciation: Moving from surviving to thriving. শুধুমাত্র বেঁচে থাকা নয়, বরং অটিজমে আক্রান্ত মানুষদের রয়েছে একটি সমৃদ্ধশালী জীবনের অধিকার। এ অধিকার নিশ্চিতে অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিসহ সকল জনগণের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে চিকিৎসার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নয়ন করা জরুরী।
আজ ১ লা এপ্রিল ২০২৪ ১৭তম আন্তর্জাতিক অটিজম সচেতনতা দিবস ২০২৪ পালন উপলক্ষে ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশনের ভূমিকা শীর্ষক টকশোতে বক্তারা একথা বলেন। টকশোতে বক্তারা বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের উদাহরণ অনুসরণে চিকিৎসা নির্ভরতা কমিয়ে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে বাংলাদেশেও হেল্থ প্রমোশনে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের কমিউনিকেশন অফিসার শানজিদা আক্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোঃ আজমুল হক, স্পর্শ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট এবং ফাউন্ডার নাজিয়া জাবিন, সোসাইটি ফর দি ওয়েল ফেয়ার অব অটিস্টিক চিলড্রেনের পরিচালক সুবর্ণ চাকমা, এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী।
মোঃ আজমুল হক বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ, অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের আবাসনের ব্যবস্থা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিঠি প্রেরণ উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেন প্রতিবন্ধী মানুষের চাকরির সুযোগ তৈরি হয় সে বিষয়ে কিছু কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পালন করতে পারে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠানগুলোকে উন্মুক্ত স্থান, হাসপাতাল, স্কুলে যাতায়াতসহ সকল গণপরিসর এবং ফুটপাত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহার উপযোগী করার বিষয়ে আহ্বান জানানো হচ্ছে। হেল্থ প্রমোশনে সরকারের সকল মন্ত্রণালয়কে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে এবং এক্ষেত্রে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
নাজিয়া জাবিন বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষেরা ব্রেইল এর মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন। স্পর্শ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা এখন সকল বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। কিছু শিক্ষার্থী আছে যাদের মানসিক বিকাশের একটি অংশ হচ্ছে বই পড়া। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের লক্ষ্যে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত করতে হবে। এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে সকলকে ‘দৃষ্টি প্রতিবন্ধী’ শব্দটির পরিবর্তে দৃষ্টিজয়ী’ শব্দটি ব্যবহারের অনুরোধ জানান।
সুবর্ণ চাকমা বলেন, ২০১১ সাল থেকে সরকারি উদ্যোগে অটিজম আক্রান্তদের জন্য অনেক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু সকল পর্যায়ের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে শিশুর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রতিটি অপ্রতিবন্ধী মানুষের ন্যায় অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের শারীরিক সুস্থতার সাথে সাথে মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করে সমাজের অংশ হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরী। পাশাপাশি শিশুর প্রতিভা বিকাশের জন্য পরিবার, সমাজ এবং সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
গাউস পিয়ারী বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে উন্মুক্ত স্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে খেলার মাঠ, পার্ক এবং সবুজের পরিমাণ ক্রমেই কমে আসছে। এমনকি বিদ্যমান মাঠ ও পার্কগুলোও শিশু, বৃদ্ধ, নারী ও অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিসহ সকল ব্যক্তির ব্যবহার উপযোগী নয়। অপরদিকে সকল মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে সামাজিক ও সৃষ্টিশীল কার্যক্রমের সুযোগ নগরে বিদ্যমান নেই। বাংলাদেশে অন্যান্য খাতের ন্যায় স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হলেও অধিকাংশই চিকিৎসা কেন্দ্রিক। অসুস্থ জনগণের সুস্থতায় সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাষ্ট্রের জনগণ যেন সুস্থ থাকতে পারে সে বিষয়টির উপরেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিতভাবে কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি স্বাস্থ্য উন্নয়ন প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন। একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জনগনের স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশগত উন্নয়নে হেল্থ প্রমোশন একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে।