১৯ জানুয়ারী ২০১২ তারিখ সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি কক্ষে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, বাংলাদেশ ইনিষ্টিটিউট অব প্লানাসর্ (বিআইপি), পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট আয়োজিত এক সেমিনার বক্তারা এই দাবি জানান। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এমপি, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান, রেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী আবু তাহের, বিআইপি-র সভাপতি গোলাম রহমান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-র পরিচালক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, বুয়েট এর নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক সুমন মিত্র। সভা সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রকল্প সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম সুজন।
রেলমন্ত্রী রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তার বক্তব্যে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেলের প্রয়োজনীয়তা রাজনৈতিক দলগুলোকে উপলব্ধি করতে হবে। রেলের গুরুত্ব তুলে ধরনের রাজনৈতিক দলগুলোকে সচেতন করতে সামাজিক সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি হিসাবে রেল উন্নয়নকে অন্তর্ভূক্ত করা দরকার। কারণ রেল আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, অবহেলা ও নানা পক্ষের ষড়যন্ত্রে রেল যখন খুব নাজুক অবস্থায় তখর এ মন্ত্রণালয় করা হয়েছে, আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমি রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে রেলকে বাংলাদেশের প্রধান যাতায়াত মাধ্যম হিসাব গড়ে তুলতে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করব। রেলমন্ত্রী আরও বলেন, রেলের প্রসারে এই স্বল্প সময়ে ডবল লাইন তৈরি, ইঞ্জিন ও বগি মেরামত, ওয়ার্কশপ চালু করার বিষয়গুলো অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। ঢাকার সঙ্গে গাজীপুর পর্যন্ত চারটি রেললাইনে উন্নীত করার কাজ শুরু করব। তিনি বলেন রেলের জন্য পৃথক বাজেটের এবং অপপ্রচার ঠেকাতে জনগনকে এগিয়ে আসতে হবে।
সৈয়দ মাহবুবুল আলম, রেল এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার লাভ শুধুমাত্র টাকার অংকে বিবেচনা করলে চলবে না। রাষ্ট্রীয়, পরিবেশ, অর্থনীতিতে যে সকল অবদান রাখছে তাও বিবেচনা করতে হবে। হাতে গুনা কয়েকটি দেশ ব্যতীত অধিকাংশ দেশেই রেলে যাত্রীখাতে লাভ হয় না। রেলের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে মালামাল পরিবহনের উপর জোর দিতে হবে। পাশাপাশি রেলের আয় বৃদ্ধিতে রেলের সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত, বিজ্ঞাপন, পর্যটন শিল্পের সাথে সমন্বয় সাধন, ট্রান্সএশিয়ার রেলওয়ের সাথে সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা করতে হবে। এছাড়া রেলের কারিগরি জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সহযোগি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব যে প্রতিষ্ঠানগুলো রেলের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করতে পারে।
মনজুরুল আহসান খান বলেন, পন্য পরিবহন, যাতায়াত সকল কিছুর সাথে আমাদের রেলযোগাযোগ জড়িত বিধায় রেলকে আমাদের দেহের রক্ত চলাচলের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। ট্রেন চলাচল বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইঞ্জিন ও ওয়াগন ক্রয়, পুরাতন ইঞ্জিনগুলো মেরামতের জন্য ওয়ার্কশপের ক্ষমতা বৃদ্ধি, ডবল লাইন তৈরির পদক্ষেপ গ্রহনের অনুরোধ জানায়। পাশাপাশি সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেতে রেলের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়নের সুপারিশ করেছে।
আবু নাসের খান বলেন ঋণপ্রদানকারী গোষ্ঠীর প্ররোচনায় রেলকে বিভিন্নভাবে সংকুচিত করা হয়েছে। বাজেট, পরিকল্পনা ও লোকবল সংকটের কারণে রেলের কর্মীরা অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত সেবা জনগনকে প্রদান করতে পারছে। এই সকল সীমাবদ্ধতার মাঝেও রেলবিভাগের কর্মীরা রেলকে সচল রেখেছে যা প্রশংসার দাবিদার। রেলের কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধিতে প্রশংসার পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধির সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। রেলের দুনীতি বিষয়ক আলোচনায় টিকেট কালোবাজারী, ট্রেনের তেল চুরির মতো বিষয়গুলো গুরুত্বপুর্ণ হয়ে থাকে। তবে রেলের সবচেয়ে বড় দুনীতির ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়ন, অবকাঠামো ও ক্রয়খাতে। রেল মহাপরিচালক প্রকৌশল আবু তাহের বলেন, রেল সাধারণ মানুষের বাহন। কিন্তু যখন দিনের পর দিন রেল ধ্বংস হয়েছে তখন গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের বড় অংশই নিশ্চুপ ছিল। আজ আমরা আশাবাদী, যাত্রীদের আস্থায় আনতে পারব বলে বিশ্বাস। নগর পরিকল্পনাবিদ নিয়াজ রহমান বলেন, প্রস্তাবিত এলিভেট এক্সপ্রেসওয়ে হলে রেলে ৩য় ও ৪র্থ লাইনের সম্প্রসারণ বন্ধ বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া প্রস্তাবিত মেট্রোরেলে হলে কিছু মানুষ উপকৃত হবে। উড়াল সড়ক ও মেট্রো রেলের পরিবর্তে এ অর্থ রেল এ বিনিয়োগ করা হলে সারাদেশের মানুষ উপকৃত হবে, নগরের উপর চাপ বহুলাংশে কমে আসবে।
বক্তারা সুপারিশে রেলের জন্য গবেষণার প্রতিষ্ঠান গড়া, রাষ্ট্রীয় মালিকানায় সরকারী পরিচলনায় জনগনের সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে রেলের প্রসার নিশ্চিত, রেলের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি নিশ্চিত, রেলের প্রয়োজনীয় রোলিং স্টক ক্রয় এবং মেরামত নিশ্চিত, রেলের ম্যাকানিকাল, সিভিল, ট্রাফিক, সিগন্যাল, স্টোর এর বিদ্যমান সমস্যা সমাধান ও উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ, রেলের যাতায়াত দুরত্ব, সময় হ্রাসে কর্ডলাইন ও ডাবল লাইন স্থাপন, যাত্রীদের চাহিদা অনুসারে দক্ষতার সাথে ট্রেনের সময় ব্যবস্থাপনা, মালামাল পরিবহণে রেলওয়েকে ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ, রেলকে প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলতে সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিকল্পনা প্রনয়ণ করার সুপারিশ করেন। মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন নগর পরিকল্পনাবিদ নিয়াজ রহমান, বিলস এর কর্মকর্তা কবীর আহমেদ, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এর চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ময়না, বাপা নির্বাহী সদস্য মহিদুল হক খান, ড. মুস্তাফিজুর রহমান, ইকরাম আহমেদ।