ঢাকা শহরে ৬০ শতাংশ মানুষ হেঁটে যাতায়াত করে, অন্যদিকে শহরে মাত্র ৫-৭% মানুষের ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে। তা স্বত্বেও নগর যাতায়াত পরিকল্পনায় ব্যক্তিগত গাড়িকেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রকল্প গৃহীত ও অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে। একটি টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর গড়ে তোলা এবং অধিকাংশ মানুষের যাতায়াত চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পথচারী ও সাইকেলবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতের কোন বিকল্প নেই। তাই এক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২৩ সালে বিশ্ব নগর দিবসের প্রতিপাদ্য “Financing sustainable urban future for all”
আজ ৩১ অক্টোবর ২০২৩ সকাল ১১.০০ টায় বিশ্ব নগর দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি), প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, গ্রীন ভয়েজ, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, আলী হোসেন বালিকা বিদ্যালয়, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুল, ছায়াতল বাংলাদেশ, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ, এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট-এর সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত “পথচারী ও সাইকেলবান্ধব পরিকল্পনাঃ নগর যাতায়াত ব্যবস্থায় টেকসই সমাধান” শীর্ষক সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে বক্তারা এ কথা বলেন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপতিত্বে এবং সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ মিঠুনের সঞ্চালনায় আয়োজনে বক্তব্য রাখেন সংস্থার প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আকতার, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এমএ মান্নান মনির, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এইচ এম নুরুল ইসলাম, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ কাউসার, আলী হোসেন বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জনাব নিউটন, ছায়াতল বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবক মোঃ ইমন।
বক্তারা বলেন, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় একটি ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর গড়ে তোলার বিষয়ে জোরারোপ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে এমন প্রকল্প-পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা আবশ্যক, যেখানে শহরের অধিকাংশ মানুষ উপকৃত হবেন। রাজধানীতে প্রতিদিন এক কোটিরও বেশিবার হেঁটে যাতায়াত করে পথচারী। গবেষণায় দেখা গেছে, এ এক কোটি পথচারীর জন্য বরাদ্দ মাত্র ০.২৪ শতাংশ। অন্যদিকে প্রায় ২ লক্ষ জনগণ সাইকেলে যাতায়াত করা স্বত্বেও সাইকেলবান্ধব যাতায়াত নিশ্চিতে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে সাইকেল লেন প্রদান করা হলেও রুট নেটওয়ার্ক ও সাইকেল পার্কিং-এর সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায়, সাইক্লিস্টগণ উপকৃত হননি।
বক্তারা আরো বলেন, পরিকল্পিত নগরায়নের অভাবে ঢাকা মহানগরী ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। জনসংখ্যার আধিক্যের সাথে সাথে এ শহরে যাতায়াত চাহিদা ও যান্ত্রিক যানবাহন বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকা পরিণত হয়েছে যানজটের শহরে। সেই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে জ্বালানী ব্যয়, দূষণ ও সড়ক দুর্ঘটনা এবং পক্ষান্তরে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে। পথচারী ও সাইকেলবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থা, যাতায়াত চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দৈনন্দিন শারীরিক কার্যক্রমের চাহিদা পূরণ করে এবং জ্বলানী ব্যবহার ও কার্বন নির্গমন হ্রাস করে, যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য উভয় ক্ষেত্রেই ইতিবাচক অবদান রাখে। অর্থাৎ, বাসযোগ্য, টেকসই, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর গড়ে তুলতে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পথচারী ও সাইকেলবান্ধব শহর গড়ে তোলা প্রয়োজন।
আয়োজন থেকে হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াতবান্ধব পরিকল্পনা গ্রহণ; সড়ক প্রশস্ত করার জন্য ফুটপাত সংকোচন থেকে বিরত থাকা; প্রতিবন্ধকতাবিহীন ফুটপাত ও সাইকেল লেন নিশ্চিতকরণ; হকারদের উচ্ছেদের পরিবর্তে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা; শিশু, নারী, বৃদ্ধ, অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় সমতলে রাস্তা পারাপারে জেব্রাক্রসিং এবং সাইক্লিস্টদের জন্য নিরাপদ সড়ক পারাপারের ব্যবস্থা করা; পথচারী ও সাইক্লিস্টদের জন্য পানি, শৌচাগার, ছাউনি, গাছের ছায়া, পর্যাপ্ত আলো ও বসার ব্যবস্থা করা; ফুটপাত ও সড়কে অবৈধ পার্কিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা; সাইকেল ও পথচারীদের রুট নেটওয়ার্ক নিশ্চিতকরণ; নিরাপদে সাইকেলে যাতায়াত নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সাইন প্রদান; সাইকেল পার্কিং এর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; সাইকেলের উপর কর মওকুফ করা; পথচারী ও সাইকেলবান্ধব নীতি, আইন, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
আয়োজনে আরো উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ।