বিশ্বের যেখানেই প্রাইভেট কারের উপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে সেখানেই যানজট, সময় অপচয়, জ্বালানী অপচয়ের মত সমস্যাগুলো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস ২০২৩ উদযাপনের মধ্য দিয়ে আমরা নীতিনির্ধারকদের কাছে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ এবং হাঁটা, সাইকেল, গণপরিবহনবান্ধব নগর যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিতের গুরুত্ব তুলে ধরতে চাই।
আজ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষ্যে ধানমন্ডি ২৭ এর মোড় থেকে আবাহনী খেলার মাঠ পর্যন্ত আয়োজিত “স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি” শীর্ষক র্যালিতে বক্তারা এ কথা বলেন। বিশ্বব্যাপী বর্তমানে প্রায় ৪০০০ শহরে দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও ২০০৬ সাল থেকে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে। বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস আয়োজক সংস্থাসমূহের সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত র্যালীতে রায়েরবাজার এলাকার শিক্ষার্থী এবং বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিসহ দুই শতাধিক অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট- এর সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ মিঠুনের সঞ্চালনায় আয়োজনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জনাব শেখ মোহাম্মদ হোসেন খোকন। র্যালীর পূর্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী। আরো বক্তব্য রাখেন নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবীর, ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর নির্বাহী পরিচালক আদিল মোহাম্মদ খান, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এম এ মান্নান মনির, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তাহাজ্জোত হোসেনসহ আরো অনেকে।
শেখ মোহাম্মদ হোসেন খোকন বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে সৃষ্ট সমস্যা সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত। গাড়িকেন্দ্রিক নগর যাতায়াত পরিকল্পনার কারণে গাড়ির সংখ্যা যেমন বেড়েছে, ঠিক তেমনি ট্রাফিক জ্যামও বেড়েছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হবে।
হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। বাংলাদেশে 'কার ফ্রি ডে' অনেক বছর ধরে উদযাপন করা হলেও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে কোন টেকসই উদ্যোগ বা দিবসটি জাতীয় পর্যায় থেকে পালনের কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। এ বিষয়ে ডিটিসিএ, সিটি কর্পোরেশন, সড়ক পরিবহন বিভাগ-কে আরো সচেষ্ট হতে হবে।
হেলাল আহমেদ বলেন, যাতায়াত পরিকল্পনায় যান্ত্রিক যানবাহন যেভাবে প্রাধান্য পায় সেভাবে হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াত প্রাধান্য পায় না। অনেকে আবার পথচারী ও সাইক্লিস্টদের যান্ত্রিক যান চলাচলের ক্ষেত্রে বাধা বলে মনে করেন। পথচারী ও সাইকেলবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে স্বল্প দূরত্বে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে মানুষকে নিরুৎসাহিত করা সম্ভব। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন।
আলমগীর কবীর বলেন, ২০১৯ সালে বায়ুদূষণের প্রভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ ৮৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। দেশে বায়ুদূষণের শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ এবং যান্ত্রিক যানের নিয়ন্ত্রণহীন সংখ্যা বৃদ্ধি এর অন্যতম কারণ। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিত করতে আমাদের কর্তব্য ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ। আজকের এ আয়োজনের মাধ্যমে এ বার্তাই আমরা পৌঁছে দিতে চাই।
আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ধারণ ক্ষমতার থেকে অনেক বেশি পরিমাণে ব্যক্তিগত গাড়ি ঢাকা শহরে রয়েছে। ফলে যানজট, দূষণসহ বিভিন্ন সমস্যাও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে চলেছে। যথাযথ নগর পরিবহন পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। সেই সাথে পরিকল্পনাগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে গাড়িমুক্ত রাস্তা তৈরি করা প্রয়োজন।
গাউস পিয়ারী বলেন, রাজউকের আওতাধীন এলাকায় ১৩,৮৬৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে মাত্র সাড়ে ১০ শতাংশ রাস্তা ২০ ফুটের বেশি চওড়া। অপ্রশস্ত সড়কগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল সময় নিয়ন্ত্রিত করা বা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, এবং সপ্তাহে একদিন সমগ্র শহর ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
আবু নাসের খান বলেন, ঢাকা শহরে ৫-৭ শতাংশ মানুষের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে। তাতেই যানজট এমন অবস্থা ধারণ করেছে যে গাড়ির গতি হাঁটার গড় গতির নিচে নেমে গেছে। ঢাকার বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, বাস সার্ভিস উন্নয়ন এবং হেঁটে যাতায়াতের সুষ্ঠুু পরিবেশ নিশ্চিতের বিকল্প নেই।