আজ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সকাল ১১.০০ টায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, বুয়েট, ইনস্টিটিউট ফর প্লানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি), নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), দি ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী সভাকক্ষে ‘ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা ও ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থায় গৃহীত পদক্ষেপসমূহ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন।
পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান সভাপতিত্বে এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইপিডি-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মোহাম্মদ খান। আরো বক্তব্য রাখেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী, বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবীর সুমন, আইপিডি’র পরিচালক মোঃ আরিফুল ইসলাম, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, বুয়েট-এর নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এর সহযোগী অধ্যাপক সাদিয়া আফরোজ।
ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, মানসম্মত গণপরিবহন এর অভাবে মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ায় এর সংখ্যা, ব্যবহার, ও যানজট বেড়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ এবং টেকসই পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করবার পর্যায়ক্রমিক উদ্যোগ গ্রহণ এবং পথচারীবান্ধব নগর গড়বার জন্য ফুটপাত নির্মাণ ও হাঁটার উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে রাষ্ট্রের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
হুমায়ুন কবীর সুমন বলেন, বাংলাদেশে ২০০৬ সাল থেকে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস উদযাপন করা হলেও নীতি নির্ধারনী মহল থেকে কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে বহুমাধ্যমভিত্তিক সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।
হেলাল আহমেদ বলেন, নীতিনির্ধারকদের দৈনন্দিন কার্যক্রম এবং প্রকল্প গাড়ি-কেন্দ্রিক হওয়ায় হাঁটা, সাইকেল ও পাবলিক ট্রান্সপোর্টের উন্নতির প্রতি তাদের উদাসীনতা রয়েছে। এলাকার অভ্যন্তরে পথচারীদের নিরাপত্তা বাড়াতে ব্যক্তিগত যানবাহনের গতি সীমিত করা এবং বেসরকারি ও সরকারি বিভিন্ন ধরণের সংস্থা তাদের কর্মীদের ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য যে সকল প্রণোদনা প্রদান করে, তা সীমাবদ্ধ করা প্রয়োজন।
গাউস পিয়ারী বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় ২০২৩ সালেও বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে র্যালী, সাইকেল র্যালী, খিলগাঁও ও মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটিতে গাড়িমুক্ত সড়ক কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুদের খেলাধূলার আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ সকল উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং হেঁটে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আমরা সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চাই।
সাদিয়া আফরোজ বলেন, হাঁটা, সাইকেলবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাসমূহ এবং সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ গ্রহণ আবশ্যক। এক্ষেত্রে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় বুয়েট সহযোগিতা প্রদান করবে। সেই সাথে শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ যাতায়াত পরিবেশ নিশ্চিতে নগর এলাকায় পরিকল্পনামাফিক কার ফ্রি স্কুল জোন গড়ে তোলা প্রয়োজন।
মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন গড়ে ওঠায় শিক্ষা, কর্মসংস্থান, চিকিৎসার জন্য মানুষ এ শহরে আসে। ঢাকায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সমগ্র দেশে উন্নয়ন নিশ্চিতে উদ্যোগ গ্রহণ আবশ্যক। স্কুল ডিস্ট্রিক্ট কনসেপ্ট এর মাধ্যমে এলাকার স্কুলেই যেন শিশুরা হেঁটে যেতে পারে সেদিকে জোরারোপ করা প্রয়োজন। এজন্য প্রতিটি এলাকায় সমমানের স্কুল নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকার বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে আবু নাসের খান বলেন, উন্নয়ন হতে হবে সাধারণ মানুষের জন্য। ফলে পরিকল্পনাগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে গাড়িমুক্ত রাস্তা তৈরি করা, শহরের বিভিন্ন রুটের জন্য বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের সেবা ও পরিধি বৃদ্ধি, এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার এর মত ব্যয়বহুল প্রকল্পসমূহে বিনিয়োগ কমিয়ে গণপরিবহন তথা বাস, রেল ও নৌপথে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা এবং বহুমাধ্যমভিত্তিক সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় গবেষণা, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ছায়াতল বাংলাদেশ, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুল, বেঙ্গলী মিডিয়াম হাই স্কুল, ওয়ার্ল্ড কনসার্ন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংগঠন, লিও ক্লাব অব ঢাকা ওয়েসিস, সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ, সাইকেলার্স অব বাংলাদেশ, সিডিপি, ডিডিপি, বি-স্ক্যান, নবনীতা মহিলা কল্যাণ সমিতি- এর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ।