ঢাকা শহরে ৫-৭ শতাংশ মানুষের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে। তাতেই ভয়াবহ যানজটের কারণে গাড়ির গতি হাঁটার গড় গতির নিচে নেমে গেছে। এ শহরে শিশুদের খেলার জায়গা নেই, মানুষের আবাসস্থলের সংকট, সেখানে গাড়িকে প্রাধান্য দিয়ে নগর যাতায়াত পরিকল্পনা যুক্তিযুক্ত নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং হেঁটে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের কোন বিকল্প নেই। আজ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বিকাল ৩.০০ টায় বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজিত সামাজিকীকরণ ও বিনোদনের জন্য শিশুদের খেলাধূলার আয়োজন খিলগাঁও গাড়িমুক্ত সড়ক কর্মসূচি থেকে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
আয়োজনে খিলগাঁও গাড়িমুক্ত সড়ক কর্মসূচির আহ্বায়ক এবং নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়নার সভাপতিত্বে এবং মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আতিক মোর্শেদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১,১১,১২ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি। আয়োজনে আরো বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান, শহীদ বাবুল একাডেমীর প্রধান শিক্ষক মিরা রায়, পল্লীমা সংসদের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ মনসুর, পল্লীমা সংসদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোশারফ হোসেন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট পরিচালক গাউস পিয়ারী। আয়োজনে খিলগাঁও এলাকার তিন শতাধিক শিশু খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১,১১,১২ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বলেন, ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কে বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে দীর্ঘ সময় গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। কখনো আবার ফুটপাতে গাড়ি পার্কিং করে রাখতে দেখা যায়। এ শহরে শিশুদের খেলার জায়গা নেই, কিন্তু যথেচ্ছ পার্কিং এর সুযোগ আছে। কম ব্যস্ত সড়কগুলোতে গাড়ি পার্কিং এর পরিবর্তে দিনের নির্দিষ্ট সময় শিশুদের খেলাধূলার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, ঢাকা শহরে প্রাইভেট কারের ব্যবহার বৃদ্ধি যানজটের অন্যতম কারণ। যানজটের কারণে নষ্ট হচ্ছে সময়, অপচয় হচ্ছে অতি মূল্যবান জ্বালানী এবং দূষিত হচ্ছে প্রাকৃতিক ও বসবাসের পরিবেশ। সড়ক গাড়ির জন্য নয়, বরং এটি গুরুত্বপূর্ণ গণপরিসর। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সড়কে মানুষের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি বছর ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালিত হয় বাংলাদেশেও ২০০৬ সাল থেকে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে। এ বছরও সাইকেল র্যালী, হাঁটা র্যালী, সচেতনতামূলক কর্মসূচি, সেমিনার, গাড়িমুক্ত সড়ক কর্মসূচির মত ধারাবাহিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে বেসরকারি সংস্থাসমূহ দিবসটি উদযাপন করছেন।
শহীদ বাবুল একাডেমীর প্রধান শিক্ষক মিরা রায় বলেন, এলাকার শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় গাড়ি চলাচল বন্ধ বা সীমিত রেখে সামাজিকীকরণ ও খেলাধূলার সুযোগ সৃষ্টি অত্যন্ত কার্যকর ও সময়োপযোগী উদ্যোগ। প্রতিটি ওয়ার্ডে এ ধরণের আয়োজন করা হলে ঢাকাবাসী উপকৃত হবেন।
পল্লীমা সংসদের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ মনসুর বলেন, ঢাকায় পর্যাপ্ত মাঠ-পার্ক নেই, যা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে অন্তরায়। গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজন এক্ষেত্রে খেলাধূলার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এ সমস্যার অনেকটাই সমাধান করতে পারে। যানজট হ্রাসে কিছু সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা এবং সপ্তাহে একদিন শহরব্যাপী ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
পল্লীমা সংসদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, যাতায়াত পরিকল্পনায় যান্ত্রিক যানবাহন যেভাবে প্রাধান্য পায়, হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াত সেই গুরুত্ব পায় না। ঢাকা শহরে প্রায় প্রতিটি পরিষেবা দুই-তিন কিলোমিটারের মধ্যে পাওয়া যায়। হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াতের উপযোগী পরিবেশ পেলে জনগণ স্বল্প দূরত্বে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে আর আগ্রহী হবেন না। পক্ষান্তরে যানজট কমে আসবে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধির সাথে বায়ু দূষণ ও শব্দদূষণের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। ঢাকা মহানগরী পৃথিবীর শীর্ষ পাঁচটি বায়ুদূষণের নগরীর অন্যতম এবং নগরের বিভিন্ন স্থানে শব্দের মাত্রা মানদন্ড থেকে প্রায় ২ গুণ বেশি। গাড়ির ব্যবহার হ্রাস পেলে জ্বালানি ব্যয়, কার্বন নির্গমন, বায়ু ও শব্দদূষণ হ্রাস পাবে বহুলাংশে। ফলে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।
খিলগাঁও গাড়িমুক্ত সড়ক কর্মসূচির আহ্বায়ক এবং নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত ৬,৪৯৫ টি ব্যক্তিগত গাড়ি এ শহরে নিবন্ধিত হয়েছে এবং বর্তমান ধারা অব্যহত থাকলে আরো বেশি সংখ্যক মানুষ গাড়ি কেনার দিকে ঝুঁকে পড়বে। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, বাস সার্ভিস উন্নয়ন এবং হেঁটে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের কোন বিকল্প নেই।