সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন মাঠ-পার্কগুলো উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও বেশ কিছু মাঠ-পার্কের উন্নয়ন কার্যক্রম নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ায় সেগুলো বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আবার কিছু মাঠ-পার্ক উন্মুক্ত হলেও অধিকাংশ সময় ঘাস ও বিভিন্ন উপকরণ রক্ষা করতে বন্ধ রাখা হয়। নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সকল মাঠ-পার্ক দ্রুত উন্মুক্ত করে দেয়া আবশ্যক।
আজ ১৭ আগস্ট ২০২৩, সকাল ১১.০০ টায় শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, নাগরিক অধিকার সংরক্ষন ফোরাম, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, গ্রীন ভয়েজ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টসহ ১৭টি সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত “দ্রুত উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করে মাঠ-পার্ক সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হোক” শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচি থেকে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এম এ মান্নান মনিরের সভাপতিত্বে এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ মিঠুনের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংস্থার সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান। আরো বক্তব্য রাখেন রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ তাহাজ্জোত হোসেন, বি-স্ক্যান-এর এডভোকেসি এন্ড কমিউনিকেশন অফিসার সৈয়দ বোরহানউদ্দিন, ডিডিপি-এর সভাপতি জাকির হোসেন, এবং ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশের কমিউনিকেশন অফিসার মাহামুদুল হাসান।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী, ওসমানী উদ্যান, ফার্মগেট পার্ক, পান্থকুঞ্জ, ফজলে রাব্বী পার্কসহ বিভিন্ন মাঠ-পার্ক-উদ্যান বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায়, যে মাঠ-পার্কগুলো উন্নয়নের পর উন্মুক্ত করা হয়েছে তাও বিভিন্ন ক্লাব বা স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে থাকে। একাডেমিগুলো টাকার বিনিময়ে খেলাধূলা করলেও সাধারণ জনগণের প্রবেশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। অনতিবিলম্বে সকল মাঠ-পার্ক নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানাই।
রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ তাহাজ্জোত হোসেন বলেন, মাঠ-পার্কগুলো উন্নয়নের উদ্যোগে জনমনে যে স্বস্তির সঞ্চার হয়েছিলো, তার প্রতিফলন বর্তমানে দেখা যাচ্ছে না। বিশেষত বাণিজ্যিক স্থাপনাসমূহ গড়ে ওঠায় মাঠ-পার্কের বৈশিষ্ট্য নষ্ট হচ্ছে। অন্তর্ভূক্তিতা ও প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতের মাধ্যমে মাঠ-পার্কে এলাকাবাসীর অধিকার নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বি-স্ক্যান-এর এডভোকেসি এন্ড কমিউনিকেশন অফিসার সৈয়দ বোরহানউদ্দিন বলেন, বিভিন্ন কর্পোরেট কার্যক্রমের জন্য মাঠ-পার্ক ব্যবহার করতে দেয়া হয়, কিন্তু শিশু-কিশোররা মাঠে খেলার অধিকার পায় না, যা তাদের ক্রমে বিপথগামী করে তুলছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতাও মাঠ-পার্কগুলোতে নিশ্চিত করা হয়নি। প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাদের মতামত গ্রহণ ও এর প্রতিফলন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
ডিডিপি-এর সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, মাঠ-পার্কগুলো উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল নকশা প্রণয়ন থেকে বিরত থেকে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে খরচ অনেকটা কমে আসবে এবং রক্ষণাবেক্ষণও অনেক সহজ হবে। আমাদের নগরে মাঠ-পার্কের সংখ্যা যথেষ্ট অপ্রতুল। এ অবস্থায় দখলকৃত মাঠ-পার্ক ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় গণপরিসর হিসেবে চিহ্নিত সকল স্থান পুনরুদ্ধার ও সংস্কার করার আশু উদ্যোগ নেয়া আবশ্যক।
ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশের কমিউনিকেশন অফিসার মাহামুদুল হাসান বলেন, বড় আকারের মাঠ-পার্ক তৈরি সময় সাপেক্ষ বিষয়। প্রাথমিকভাবে ওয়ার্ডভিত্তিক গাড়িমুক্ত সড়ক বা মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড আয়োজনের মাধ্যমে অস্থায়ী খেলাধূলার সুযোগ তৈরি করা হলে শিশু-কিশোর ও এলাকাবাসী উপকৃত হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এম এ মান্নান মনির বলেন, উন্নয়ন কাজে এলাকাবাসীর সম্পৃক্ততা না থাকায় তাদের চাহিদার প্রতিফলন মাঠ-পার্কে থাকছে না। সকল বয়স, লিঙ্গ ও সামর্থ্যরে মানুষের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় মাঠ-পার্কের নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঠে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ছায়াতল বাংলাদেশের, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ।