অপরিকল্পিত নগরায়ন, যানজট, দূষণসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা বাসযোগ্য শহরের তালিকায় তলানিতে। বাসযোগ্য এবং পরিকল্পিত ঢাকা গড়ে তোলার লক্ষ্যে নগর সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ড্যাপ বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।
আজ ১২ নভেম্বর ২০২২, শনিবার, সকাল ১১.০০ জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে “ঢাকা মহানগর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০২২-৩৫) বাস্তবায়নে করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা দ্রুত ড্যাপ বাস্তবায়নের দাবি তুলে ধরেন।
পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট্রের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আকতার। আয়োজনে বক্তব্য রাখেন দি ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি) এর সভাপতি প্রকৌশলী মোঃ নুরুল হুদা, ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আশরাফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী।
নাঈমা আকতার তার প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধির বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার ৫.২% থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ শহরে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা দাঁড়াবে ৩,৬০,০০০ এবং এগুলো পার্ক করতে জায়গা প্রয়োজন ৩.৬ বর্গকিলোমিটার। উন্নত বাস পরিষেবা, মনোরম হাঁটার পরিবেশ, সাইকেল লেন তৈরি করার মাধ্যমে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এ কারণে ড্যাপে অগ্রাধিকারমূলকভাবে প্রথম ৫ বছরে ১০০০ কিলোমিটার হাঁটার পথ, ৫০০ কিলোমিটার সাইকেল লেন তৈরির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
দি ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি) এর সভাপতি প্রকৌশলী মো: নুরুল হুদা বলেন, ড্যাপ বাস্তবায়নে একটি এ্যাকশন প্ল্যান প্রয়োজন। রাজউক থেকে পরিকল্পনা অনুমোদন করার পরে পরিকল্পনায় ব্যতয় ঘটে। একটি রেগুলেটরী বডির মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি সকল অংশীদারদের সমন্বয়ে একটি সংস্থা তৈরি করে একজন মন্ত্রীর দায়িত্বে ড্যাপ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।
ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, একটি এলাকার নাগরিক সুবিধাকে বিবেচনায় না নিয়ে ভবনের উচ্চতা বৃদ্ধির অনুমোদন দেয়া হলে এলাকাটি বাসযোগ্যতা হারাবে। আবাসিক এলাকায় রাস্তার প্রশস্ততা এবং জমির পরিমাণের উপর নির্ভর করে এফএআর নির্ধারণ করা হয়েছে। এফএআর প্রতি তিন বছরে এবং পুরো ড্যাপ প্রতি পাঁচ বছরে রিভিউ এর সুযোগ আছে। উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য এলাকাভিত্তিক মনিটরিং টিম তৈরির চেষ্টা করছি। রাজউক ঢাকা শহরে একক সংস্থা হিসেবে অনেক মাঠ-তৈরি করেছে। কিন্তু ব্যবস্থাপনা আমাদের কার্যপরিধির কাছে নেই। মাঠ-পার্ক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এলাকাবাসীর কাছে দেয়া প্রয়োজন। রাজউক এবং সিটি কর্পোরেশন ওয়াচডগ হিসেবে থাকবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ড্যাপের জনঘনত্ব এবং ভবনের উচ্চতা বিষয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছে। কেন্দ্রীয় ঢাকায় প্রতি স্কয়ার কিলোমিটারে ৪৯,০০০ মানুষ বাস করে। জনঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণে স্কুল, মাঠ-পার্কসহ অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে একটি শহরকে ধ্বংস করা অনুচিত। অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে একটি স্থায়ী কমিটি প্রয়োজন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আব্দুস সোবহান বলেন, পুনরুদ্ধারের আগে ড্যাপের চিহ্নিত জায়গায় মাঠ-পার্ক তৈরি করতে হবে। আমাদের পুরাতন জেলখানাকে একটি সবুজ বলয় হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ঢাকা শহরে বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, ড্যাপ বাস্তবায়নের ফলে আমরা তেঁতুলতলা মাঠ এবং প্যারিস রোড মাঠ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। ড্যাপে চিহ্নিত মাঠ-পার্কের তালিকা তৈরি করে সেগুলো উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, বর্তমান ড্যাপে অনেক আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত ধারণা প্রদান করা হয়েছে। ভূলত্রুটি বা বিতর্ক যাই থাকুক না কেন বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার বিষয়ে আমাদের কোন দ্বিমত নেই। একটি রোড ম্যাপের মাধ্যমে রাজউকের নের্তৃত্বে ড্যাপ বাস্তবায়নে উদোগ প্রয়োজন।
আয়োজনে আরো বক্তব্য রাখেন নাগরিক উন্নয়ন কেন্দ্রের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য মারুফ হোসেন, বি-স্ক্যানের কো-অর্ডিনেটর ইফতেখার মাহমুদ, পবা’র সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ, ডিডিপি’র চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এইচ এম নুরুল ইসলামসহ আরো অনেকে।