সময়-অর্থ ও জায়গার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে বড় আকারের মাঠ-পার্ক তৈরি সম্ভব নয়। এ অবস্থায় ওয়ার্ডভিত্তিক মোবাইল প্লেগ্রাউন্ড আয়োজন করার মাধ্যমে শিশুদের খেলাধূলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ তৈরি একটি সময়োপযোগী সমাধান।
আজ ০৯ নভেম্বর ২০২২, বিকাল ০৩:৩০ টায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৪ নং ওয়ার্ডের সার্বিক সহযোগিতায় পশ্চিম ধানমন্ডি শংকর কল্যাণ সমিতি, হেলথব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডা এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডবিøউবিবি) ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে চেয়ারম্যান গলিতে মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড- এর উদ্বোধনী আয়োজনে বক্তারা এ কথা বলেন। মোবাইল প্লেগ্রাউন্ড আয়োজনে এলাকার অভ্যন্তরে গাড়ি কম চলাচল করে এমন রাস্তায়, ছোটগলিতে বা রাস্তার শেষ মাথায় শিশুদের খেলাধূলা ও বয়োজ্যেষ্ঠদের বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতি মাসের ২য় ও ৪র্থ বুধবার বিকাল ৩.০০ থেকে ৫.০০ টা পর্যন্ত পশ্চিম ধানমন্ডি শংকর চেয়ারম্যান গলিতে এ ছবি আঁকা, কারুকাজ শিখানো, দাবা-লুডু-ক্যারাম-দড়ি লাফ-ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চেয়ারম্যান গলিতে মোবাইল প্লেগ্রাউন্ড কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন আয়োজনের প্রধান অতিথি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জনাব শেখ মোহাম্মদ হোসেন খোকন। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী এর সভাপতিত্বে এবং সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ মিঠুন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ মান্নান মনির, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এইচ এম নুরুল ইসলাম। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ফাইয়াজ জামান এবং শাহানাজ সুলতারা রানু।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ হোসেন খোকন বলেন, শিশু-কিশোরদের আমরা দোষারোপ করি তারা মোবাইলে আসক্ত। কিন্তু তাদের খেলাধূলার সুযোগ আমরা করে দিতে পারিনি। মোবাইল প্লেগ্রাউন্ডের মাধ্যমে শিশুদের খেলাধূলার চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ করা সম্ভব। আমি এলাকাবাসীকে অনুরোধ জানাই, শিশুদের মধ্যে ভেদাভেদ না করে তাদের সকলকে খেলাধূলায় আগ্রহী করে তুলুন। এর মাধ্যমে আমরা সমাজে সমতা নিশ্চিত করতে পারবো।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, করোনা কালে প্রথম মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড আয়োজন করে হেলথব্রিজ ভিয়েতনাম। তাদের ধারণাটিকে আমরা ঢাকার ৩৪ নং ওয়ার্ডে বাস্তবায়ন করছি। ইতোমধ্যে নিরিবিলি হাউজিং সোসাইটি ও সৈকত হাউজিং এ মোবাইল প্লেগ্রাউন্ড চলমান রয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা প্রতি সপ্তাহে প্রায় শতাধিক শিশুর জন্য খেলাধূলার সুযোগ তৈরি করে দিতে সমর্থ হয়েছি। বিশেষত কিশোরীরা সামাজিক বাধার কারণে বাইরে বের হতে আগ্রহী হয় না। মোবাইল প্লেগ্রাউন্ড আয়োজনের মাধ্যমে কিশোরীদের সামাজিকীকরণের সযোগ তৈরি হয়েছে।
ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ মান্নান মনির বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়গুলোতেও খেলাধূলার পর্যাপ্ত সুযোগ নেই। এলাকাভিত্তিক মোবাইল প্লেগ্রাউন্ডের মাধ্যমে শিশুদের খেলাধূলার সুযোগ তৈরির পাশাপাশি যে বিদ্যালয়গুলোতে খেলার মাঠ রয়েছে, সেগুলো স্কুল সময়ের বাইরে এলাকাবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া যেতে পারে।
ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এইচ এম নুরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে নগরে এলাকাভিত্তিক খেলাধূলার সুযোগের অভাবে প্রতিনিয়তই শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। শিশুরা দিন দিন টিভিতে কার্টুন ও গেইমস এ আসক্ত হয়ে পড়ছে। এলাকাভিত্তিক খেলাধূলার সুযোগ তৈরি করা হলে সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে উঠবে এবং সামাজিক অপরাধ হ্রাস পাবে।
শিশুদের খেলাধূলা ও মানসিক বিকাশের জন্য মোবাইল প্লেগ্রাউন্ড আয়োজন করায় আনন্দ প্রকাশ করে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে নিয়মিত মোবাইল প্লেগ্রাউন্ড আয়োজনে সহযোগিতার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, প্রতি ১২,৫০০ মানুষের জন্য পার্কের জন্য ১ একর এবং খেলার মাঠের জন্য ২ একর জায়গা প্রয়োজন, যা ঢাকা শহরের অধিকাংশ ওয়ার্ডেই নিশ্চিত হয়নি। বর্তমানে ঢাকা শহরের ৩৭টি ওয়ার্ডে কোন খেলার মাঠ-পার্ক নেই। সিটি কর্পোরেশনের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণের নের্তৃত্বে এলাকার অভ্যন্তরে খুব কম খরচে ও স্বল্প জায়গায় শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে এলাকাভিত্তিক খেলাধূলা ও সামাজিকীকরণের জন্য মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড করা যেতে পারে।