বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ১৭৩টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৬৬। ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট কর্তৃক প্রকাশিত এ তালিকা অনুযায়ী, ঢাকার বসবাসযোগ্যতা প্রায় তলানিতে। বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার প্রত্যয়ে গত ২৩ আগস্ট বিষদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) অনুমোদিত হয়েছে। এতে পথচারীবান্ধব অবকাঠামো গড়ে তুলে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, গ্রীন নেটওয়ার্ক-ব্লু নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, নগরবাসীর জন্য মাঠ-পার্ক তৈরি, সড়ককে গণপরিসরে পরিণত করাসহ বিভিন্ন বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। একটি টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত শহর গড়ে তুলতে দ্রুত ড্যাপ বাস্তবায়ন জরুরি।
আজ ৩১ অক্টোবর ২০২২, সোমবার সকাল ১১.০০ টায় প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, নাগরিক অধিকার সংরক্ষন ফোরাম, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাইস্কুল, আলী হোসেন বালিকা বিদ্যালয়, ছায়াতল বাংলাদেশ, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ (আইডাব্লিউবি) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিশ্ব নগর দিবস ২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত “টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ঢাকা গড়তে ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ চাই” শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা এ কথা বলেন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপতিত্বে এবং প্রজেক্ট অফিসার প্রমা সাহার এর সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংস্থার প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আকতার। আরো বক্তব্য রাখেন নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি মোঃ হাফিজুর রহমান ময়না, সাধারণ সম্পাদক মো তৈয়ব আলী, সদস্য মো সেলিম, বি-স্ক্যানের কো-অর্ডিনেটর ইফতেখার মাহমুদ, ডিজ্যাবিলিটি ডিফারেন্ট প্রোগ্রামের পরিচালক মো জাকির হোসেন, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এর পলিসি অফিসার আ ন ম মাছুম বিল্লাহ ভুঁঞা, সহকারি পলিসি অফিসার তালুকদার রিফাত পাশা, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এম এ মান্নান মনির, আলী হোসেন বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক অর্ণব দাস। আরো উপস্থিত ছিলেন ছায়াতল বাংলাদেশ, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ, কারফ্রি সিটিস এলায়েন্স বাংলাদেশ ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর কর্মকর্তাবৃন্দ।
আয়োজনে বক্তারা বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্য ঢাকা শহরের যানজট ও দূষণের অন্যতম কারণ। হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াতের সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলা হলে ব্যক্তিগত গাড়ির উপর নির্ভরশীলতা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। সাইকেলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ঢাকা শহরে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু জায়গায় সাইকেল লেন প্রদান করা হয়েছে। যা দ্বারা কোন নেটওয়ার্ক নিশ্চিত হয়নি। বিষদ অঞ্চল পরিকল্পনায় অগ্রাধিকারমূলকভাবে ২০২ কিলোমিটার সাইকেল লেন নির্মাণের সুপারিশ দেয়া হয়েছে, যা সাইক্লিস্টদের উপকৃত করবে এবং নগরে অযান্ত্রিক যান প্রাধান্য পাবে। এছাড়াও ঢাকা শহরের অধিকাংশ গণস্থাপনা ও গণপরিসর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব নয়। ড্যাপ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। অন্যথায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
বক্তারা বলেন, ঢাকা শহরে যানজটের অন্যতম বড় কারণ ব্যক্তিগত গাড়িতে স্কুল ট্রিপ। বিষদ অঞ্চল পরিকল্পনায় ‘বিদ্যালয়ভিত্তিক অঞ্চল ধারণা’ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। যেখানে প্রতিটি এলাকায় সমমানের বিদ্যালয় নিশ্চিত করা হবে এবং শিক্ষার্থীরা এলাকার বিদ্যালয়েই শিক্ষা গ্রহণ করবে। এ ধারণাটি বাস্তবায়ন হলে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হবে এবং এলাকাভিত্তিক সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। এছাড়াও বিষদ অঞ্চল পরিকল্পনায় ৫টি বৃহৎ আঞ্চলিক পার্ক, ৫৫টি জলকেন্দ্রিক পার্ক, ১৪ টি বৃহৎ ইকোপার্ক, ১৪ টি অন্যান্য পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরির প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
আয়োজন থেকে স্কুল ডিস্ট্রিক্ট কনসেপ্টের সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত নিশ্চিত করা; এলাকাভিত্তিক সমমানের বিদ্যালয় স্থাপন; নতুন হাসপাতাল তৈরি করার পাশাপাশি বিদ্যমান হাসপাতালের মান উন্নয়ন করা; প্রস্তাবিত নতুন মাঠ-পার্ক নির্মানের সাথে সাথে বর্তমানে যেসব মাঠ-পার্ক রয়েছে তা সকলের ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলা; যেখানে পথচারী চলাচলের ঘনত্ব বেশি সেখানে কেবলমাত্র পথচারীগণের জন্য সড়ক (pedestrian-only road) ব্যবস্থা চালু করা; সকল বয়স, লিঙ্গ ও সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে পথচারীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করে ফুটপাত নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ; সহজে এবং নিরাপদে সমতলে (জেব্রা ক্রসিং দ্বারা) রাস্তা পারাপারের সুযোগ সৃষ্টি; নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলাচলের জন্য পথচারী ও সাইকেল নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করণ; ফুটপাতে হকারদের ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসা; ফুটপাত ও সড়কে অবৈধ পার্কিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা; নৌ-পথকে নগরের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম বা ব্লু নেটওয়ার্ক হিসেবে গড়ে তোলা; গাড়ি পার্কিং এর ক্রমবর্ধমান চাহিদা হ্রাসে গণপরিবহন নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি; নগর এলাকার তাপমাত্রা হ্রাসে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়।