তামাকের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন বাস্তবায়ন ও নীতিগুলো শক্তিশালীকরণসহ ধারাবাহিক ও বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ এই যে, সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে বহুবিধ ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তামাক কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে আইন বাস্তবায়ন ও সহায়ক নীতি প্রণয়নে প্রভাব বিস্তার করে আসছে। যা জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় বাস্তবায়নে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। উপরোক্ত বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে আজ ৩১ অক্টোবর ২০২২, সকাল ১১:০০টায় ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাব এর তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে “তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রধান অন্তরায় কোম্পানির হস্তক্ষেপ” শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) এর উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি (নাটাব) এর সভাপতি ও মোজ্জাফফর হোসেন পল্টু। অনুষ্ঠানে “দ্যা ইউনিয়ন” এর সহায়তায় জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সহায়ক নীতি প্রণয়নে তামাক কোম্পানীর হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের বগিত এক বছরে (সপ্টেম্বের, ২০২১ -সেপ্টেম্বের, ২০২২) তামাক কোম্পানরি হস্তক্ষপে সংক্রান্ত গবষেনা এবং “ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ ইন্ডিয়া” এর ‘ইন্টারফেয়ারন্স বাই বিগ টোব্যাকো অ্যান্ড এফিলিয়েটস ইন টোব্যাকো কন্ট্রোল ইন সাউথ এশিয়া শীর্ষক গবেষনা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমান এর সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় প্রবন্ধ দুটি উপস্থাপন করেন নাগরিক টিভির চিফ রিপোর্টার শাহনাজ শারমিন, শেয়ার বিজ এর সিনিয়র রিপোর্টার মাসুম বিল্লাহ, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা সামিউল হাসান সজীব ও আরিফ হোসেন। বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, ভাইটাল স্ট্রাটেজীস এর কান্ট্রি ম্যানেজার মো. শফিকুল ইসলাম, দৈনিক শেয়ার বজি করচা এর সম্পাদক মীর মনিরুজ্জামান, একাত্তর টেলিভিশন এর সিনিয়র রিপোর্টার সুশান্ত সিনহা, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারন সম্পাদক হেলাল আহমেদ এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর গবষেনায় বাংলাদেশে তামাক নয়িন্ত্রণে সহায়ক প্রায় সকল নীততিইে তামাক কোম্পানীর হস্তক্ষপের তথ্য পাওয়া গছে। সামাজকি দায়বদ্ধতা র্কমসূচীর তামাক কর, চোরাচালান, বভ্রিান্তকির তথ্য প্রচার বা মানি লন্ডারিং, তামাক চাষ ইত্যাদি বষিয়গুলোতে মোট ৩১২ টি হস্তক্ষপেরে তথ্য পাওয়া গছে। চারটি দেশে (বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকা) পরিচালিত তামাক কোম্পানির প্রভাব বিষয়ক অপর গবেষণাটিতে বাংলাদেশের অবস্থাও উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বাংলাদেশে তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম বিষয়ে সরকার কর্তৃক প্রণীত কোনো নীতিমালা নেই। ফলে তামাক কোম্পানীগুলো নিজেদের মতো করে সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা নিজেদের তৈরি সিগারেট পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ের পাশাপাশি কোম্পানি সম্পর্কে সমাজে একটি ইতিবাচক ইমেজ সৃষ্টি করার সুযোগ পাচ্ছে।
জনাব হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, খুচরা বাজারে তামাকজাত দ্রব্যের নিয়ন্ত্রণহীন সরবরাহ এবং কোম্পানির হস্তক্ষেপ তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রধান প্রতিবন্ধকতা। তামাক নিয়ন্ত্রন আইনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এতোদিন কোম্পানি তামাক নিয়ন্ত্রনে যে বাধার সৃষ্টি করছিলো সেটি সমাধানে বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রন আইনের প্রস্তাবনাটি প্রনয়ন করা প্রয়োজন। সুশান্ত সিনহা বলেন তামাক কোম্পানিতে সরকারের কয়কেজন উচ্চ পর্যায়ের আমলা থাকায় নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে তাদের হস্তক্ষেপের সুযোগ থেকে যায়। তিনি তামাক চাষের জমির জন্য বাধ্যতামূলক ভূমিকর এবং সামাজকি দায়বদ্ধতা র্কমসূচী (সিএসআর) এর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতি থাকা প্রয়োজন বলে অভমিত ব্যক্ত করনে। জনাব মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, সমগ্র পৃথিবীর ক্রান্তিকালীন সময়ে সম্ভাব্য দূর্ভিক্ষ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষায় তামাক চাষের বিপরীতে অন্যান্য শাক সবজি চাষে কৃষকদেরকে উদ্ভুদ্ধ করতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রনে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি তামাকের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতির সঠিক তথ্য গণমাধ্যমগুলোতে বেশি বেশি প্রচার করতে হবে।
সভায় তামাক কোম্পানি কর্তৃক বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে বিশেষ করে জাতীয় বাজেট ঘোষনার পূর্বে কিভাবে সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিতে হস্তক্ষেপ করে সে বিষয়টি আলোচনা করা হয়। বক্তারা বলনে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয় আইন বা কোড অব কন্ডাক্টরে মাধ্যমে তামাক কোম্পানরি প্রভাব প্রতহিতকরণে পদক্ষপে গ্রহণ করছে। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে তামাক কোম্পানরি হস্তক্ষপে বন্ধে কোম্পানগিুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, তামাক কোম্পানী থেকে সরকাররে শেয়ার প্রত্যাহার এবং ফ্রেমওর্য়াক কনভনেশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)এ র্আটক্যিাল ৫.৩ অনুসারে কোড অব কন্ডাক্ট প্রণয়ন জরুরী।
উক্ত সভায় সিটিএফকে, এইড ফাউন্ডেশন, নাটাব, ডরপ, টিসিআরসি, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, নারীপক্ষ, শিশুদের মুক্ত বায়ু সেবন, ডাস, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, নাফস, দিশারী, প্রজ্ঞাসহ একাধিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।