ঢাকা শহরের বিভিন্ন বিদ্যালয়গুলোতে একটি শিশুর জন্য একটি ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করায় যানজট সমস্যার মূল কারণ। সম্প্রতি গেজেটেড ঢাকার বিষদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (২০১৬-২০৩৫) স্কুল ডিসট্রিক্ট কনসেপ্টকে কাজে লাগিয়ে যানজট নিরসনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অঞ্চলভিত্তিক মানসম্মত বিদ্যালয় নিশ্চিত করা হবে এবং শিক্ষার্থীগণ এলাকার বিদ্যালয়েই শিক্ষা গ্রহণ করবে। এভাবে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে হেঁটে যাতায়াতের সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে যানজট হ্রাসে কার্যকরী ভূমিকা পালন সম্ভব। এমতাবস্থায় আমরা দ্রুত ড্যাপের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি জানাই। আজ সকাল ১১.০০ টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত “ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ: বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক লাইভ টকশো-তে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী’র সভাপতিত্বে এবং সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা মো: মিঠুনের সঞ্চালনায় আয়োজনে বক্তব্য রাখেন ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম. এ. মান্নান মনির, রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেসা, রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান এবং ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার।
রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেসা বলেন, বিষদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রণয়নকালীন ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দুইদিন ব্যাপী কর্মশালায় রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের অংশগ্রহণ ছিলো। এ কর্মশালা থেকে যানবাহন ও পথচারীর জন্য রাস্তা, সময় নিয়ন্ত্রিত রাস্তা, একমুখী রাস্তা, অযান্ত্রিক যানবাহন ও পথচারী চলাচলের রাস্তা, পথচারী প্রধান রাস্তার প্রস্তাব করা হয়। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এলাকাবাসী উপকৃত হবেন।
ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ মান্নান মনির বলেন, প্রতিটি এলাকায় মানসম্মত বিদ্যালয় নিশ্চিত না হওয়ায় অভিভাবকগণ সন্তানদের দূরবর্তী বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন যা ব্যক্তিগত গাড়িতে যাতায়াত বৃদ্ধি করে। সমমানের বিদ্যালয় নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বিআরটিএ-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২২ এর মে মাস পর্যন্ত ব্যাক্তিগত নিবন্ধিত হয়েছে ৩১,৩০৮টি। বিআরটিএ থেকে ব্যক্তিগত গাড়ির নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কঠোর বিধান আরোপ করা প্রয়োজন।
ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার বলেন, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য জলবায়ু বিপর্যয় একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় কার্বন নির্গমনও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমি প্রতিদিন হেঁটে বিদ্যালয়ে যাই। ব্যক্তিগত গাড়ির গতি ও ধোঁয়ার কারণে প্রতিদিন আমাকে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমি হাঁটার নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানাই।
রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের ক্ষেত্রে পার্কিং, ময়লা আবর্জনা, ফুটপাতে দোকানের মালামালসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আমি প্রশাসনের কাছে কঠোর পদক্ষেপ আশা করি। একটি কর্মশালা থেকে আমি শিখেছি, রায়েরবাজার এলাকার অপ্রশস্ত রাস্তায় ফুটপাত প্রদান সম্ভব না হলেও রোড মার্কিং এর মাধ্যমে পথচারীদের জন্য নিরাপদ জোন নিশ্চিত করা সম্ভব।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, বিষদ অঞ্চল পরিকল্পনায় স্কুল ডিসট্রিক্ট কনসেপ্টকে কাজে লাগিয়ে প্রতিটি এলাকার যানজট নিরসনে অঞ্চলভিত্তিক মানসম্মত ৬২৭টি বিদ্যালয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ কনসেপ্টটি বাস্তবায়িত হলে এলাকাভিত্তিক বিদ্যালয় হওয়ায় রাস্তায় যানজট কমে যাবে। শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতে পারবে ফলে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার হ্রাস পাবে এবং জ্বালানী সাশ্রয় সম্ভব হবে। ড্যাপ গেজেটেড হতে অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়েছে। এ অবস্থায় কালক্ষেপণ না করে দ্রুত ড্যাপ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।