ঢাকা বিষদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০১৬-২০৩৫) অনুযায়ী, ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় ২ লক্ষ মানুষ সাইকেলে যাতায়াত করে। নগরে সাইকেলবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত হলে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মূল সড়কে সাইকেলের গতি ১৩.৪ কি.মি/ঘণ্টা। অর্থাৎ, ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থায় সাইকেলকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে দ্রুত ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। সেই সাথে জ্বালানী ব্যয় হ্রাস, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উন্নয়নসহ বিভিন্ন উপকার পাওয়া যাবে। তাই আমরা সাইকেলবান্ধব নগর যাতায়াত নিশ্চিতের দাবি জানাই।
আজ ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, শনিবার, সকাল ০৭.৩০টায় প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ, রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, ধানমন্ডি ট্যুরিজম সাইক্লিষ্ট, লিও ক্লাব অফ ঢাকা ওয়েসিস, ফিমেল সাইকেলার্স অব বাংলাদেশ, সূর্য শিশির রানার্স কমিউনিটি, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ, কারফ্রি সিটিস এলায়েন্স বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত ‘বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস ২০২২’ পালন উপলক্ষে আয়োজিত “ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করি, পরিকল্পিত সাইকেল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলি” শীর্ষক সাইকেল র্যালি থেকে বক্তারা এ দাবি জানান।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র পরিচালক গাউস পিয়ারী’র সভাপতিত্বে এবং সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা মো: মিঠুন এর সঞ্চালনায় আয়োজনে বক্তব্য রাখেন এম এ মান্নান মনির, প্রতিষ্ঠাতা, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল; তাহাজ্জোত হোসেন, সহকারি শিক্ষক, রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়; আকিব দীপু, পরিচালক, লিও ক্লাব অফ ঢাকা ওয়েসিস; সিফাত হারুন, ফিমেল সাইকেলার্স অব বাংলাদেশ; আ ন ম মাছুম বিল্লাহ ভুঁইয়া, পলিসি অফিসার, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ; আমিনুল ইসলাম টুব্বুস, সদস্য, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ; সাইক্লিস্ট দিদার হোসেনসহ আরো অনেকে।
আয়োজনে বক্তারা বলেন, ঢাকা শহরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ সাইকেলে যাতায়াত করে এবং তরুণ প্রজন্মের অনেকেই সাইকেল চালিয়ে যাতায়াতে আগ্রহী। কিন্তু সাইকেলবান্ধব অবকাঠামো না থাকায় তাদের ঝুঁকি নিয়ে সাইকেল চালাতে হচ্ছে অথবা সাইকেল চালাতে তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। বর্তমানে যানজট ও জ্বালানী সংকট আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাইকেলে যাতায়াত সকলের জন্য সহজ ও জনপ্রিয় করে তোলা প্রয়োজন।
বক্তারা আরো বলেন, স্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং ইউরোপের অনেকগুলো ধনী ও আধুনিক শহরে সাইকেল অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি যাতায়াত মাধ্যম। ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরে মূল যাতায়াতের ৪১% সংঘটিত হয়। পৃথিবীর অনেক শহরে করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলার অংশ হিসেবে শহরে সাইকেলে যাতায়াতের সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেমন- বোগোতা, ভ্যানকুভার, সিডনিসহ বিভিন্ন শহরে অস্থায়ী সাইকেল লেন তৈরির পাশাপাশি কিছু রাস্তা ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য বন্ধ করে দিয়ে মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে, যাতে তারা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে পারে। বোগোতা শহরে বর্তমানে ৫৫০ কিমি সাইকেল লেন আছে এবং তারা আরো ৮০ কিমি সাইকেল লেন তৈরি করেছে।
আয়োজন থেকে তরুণরা দাবি জানান, কিছু সড়কে শুধুমাত্র রং দিয়ে সাইকেল লেন চিহ্নিত করে দেয়াই যথেষ্ট নয়। এজন্য স্বল্প ও দূরবর্তী যাতায়াতের জন্য সাইকেলের রাস্তা, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ একটি সমন্বিত সাইকেল নেটওয়ার্ক তৈরির পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধাদি যেমন, নিরাপদ সাইকেল পার্কিং, মেরামতের ব্যবস্থা, ছাউনি, বসার ব্যবস্থা, পানি ও গণশৌচাগারের ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। র্যালি থেকে সাইকেলবান্ধব ঢাকা গড়ে তুলতে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়- সাইকেল বান্ধব অবকাঠামো ও সাইকেল নেটওয়ার্ক তৈরি; যানবাহনের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ/যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ; সড়ক বিভাজিকার মধ্যে শুধুমাত্র পথচারী ও সাইক্লিস্টদের জন্য ফাঁকা জায়গা থাকা; সাইক্লিস্টদের জন্য নিরাপদ সড়ক পারাপারের ব্যবস্থা থাকা; ব্যস্ত সড়ক সংযোগস্থলে ‘হুক টার্ন’ (Hook turns) এর ব্যবস্থা থাকা; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাইক্লিং এর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা; সাইকেলের উপর কর হ্রাস করা; সাইকেল পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট ও নিরাপদ স্থান চিহ্নিত করা; সাইকেল চলাচলের রাস্তায় মোটরসাইকেলসহ অন্য কোনো বাহন যেন প্রবেশ না করে তা নিশ্চিত করা; সাইকেল নেটওয়ার্র্ক তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করা।