বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। ব্যক্তিগত গাড়ির নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জ্বালানি অপচয় রোধ করার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন সম্ভব। ঢাকা শহরের প্রায় ৬০% মানুষ কোন না কোনভাবে হেঁটে যাতায়াত করা স্বত্বেও নগর যাতায়াত পরিকল্পনায় হেঁটে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়নি। উপরোন্তু ব্যক্তিগত গাড়িবান্ধব এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভারের মতো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণে। ফলশ্রুতিতে নগরে যানজট, দূষণ, দুর্ঘটনাসহ ইত্যাদি সমস্যাগুলোও বেড়ে গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এবং ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলো হ্রাসের লক্ষ্যে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও পথচারীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা আবশ্যক। এ অবস্থায় দ্রুত ‘পথচারী নিরাপত্তা প্রবিধানমালা-২০২১’ প্রণয়ন সম্পন্ন ও বাস্তবায়ন করে পথচারীদের নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে হেঁটে যাতায়াত নিশ্চিতকরণের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা।
আজ ০৭ আগষ্ট ২০২২ রবিবার, সকাল ১১.০০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা), প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, বি-স্ক্যান, ডিজ্যাবিলিটি ডিফারেন্ট প্রোগ্রাম (ডিডিপি), ছায়াতল বাংলাদেশ, লিও ক্লাব অফ ঢাকা ওয়েসিস, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টসহ মোট ১৯টি সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত “জ্বালানি সাশ্রয় ও হাঁটাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে পথচারী প্রবিধানমালা দ্রুত প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করুন” শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা এ কথা বলেন। ক্যাম্পেইন থেকে সকলকে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপতিত্বে এবং প্রকল্প কর্মকর্তা প্রমা সাহার সঞ্চালনায় আয়োজনে বক্তব্য রাখেন প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আকতার, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তাহাজ্জোত হোসেন, ডিজ্যাবিলিটি ডিফারেন্ট প্রোগ্রামের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, বি-স্ক্যানের কো-অর্ডিনেটর ইফতেখার মাহমুদ, লিও ক্লাব অফ ঢাকা ওয়েসিস এর পরিচালক আকিব দীপু, ছায়াতল বাংলাদেশের ভলান্টিয়ার কাকলী কাদেরসহ আরো অনেকে।
বক্তারা বলেন, জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় সরকার বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সম্প্রতি সংকটের মুখে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাবে জনসাধারণের যাতায়াত ব্যয় ছাড়াও অন্যান্য খরচও বৃদ্ধি পাবে। ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ফলশ্রুতিতে শুধু জ্বালানি অপচয় নয়, বৃদ্ধি পাচ্ছে যানজট, দূর্ঘটনা, দূষণ। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এ সকল সমস্যা হ্রাস করা সম্ভব। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যহার নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি হেঁটে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ শহরের অধিকাংশ মানুষ হাঁটা, রিকশা, গণপরিবহনের উপর নির্ভরশীল। হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা হলে সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে।
বক্তারা আরো বলেন, জাতীয় সমন্বিত বহুমাধ্যমভিত্তিক নীতিমালা, ২০১৩ এবং স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানে পথচারীদের প্রাধান্য দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এর কোন প্রতিফলন নেই। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ‘পথচারী নিরাপত্তা প্রবিধানমালা-২০২১’ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ, সকল ধরণের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকলের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে এবং যাতায়াতের ক্ষেত্রে পথচারীদের প্রাধান্য নিশ্চিতকরণে দ্রুত ‘পথচারী নিরাপত্তা প্রবিধানমালা-২০২১’ প্রণয়ন সম্পন্ন এবং বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
কর্মসূচি থেকে বক্তারা ‘পথচারী নিরাপত্তা প্রবিধানমালা-২০২১’ দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা; সকল বয়স, লিঙ্গ ও সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে পথচারীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করে ফুটপাত নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ; সহজে এবং নিরাপদে সমতলে (জেব্রা ক্রসিং দ্বারা) রাস্তা পারাপারের সুযোগ সৃষ্টি; রাতে পথচারীদের, বিশেষত নারীদের, চলাচল নিরাপদ করার লক্ষ্যে ফুটপাথ ও সড়কে আলোর ব্যবস্থা করা; ফুটপাতে ছাউনি, বসার ব্যবস্থা, খাওয়ার পানি, গণশৌচাগার ইত্যাদি নিশ্চিতকরণ; সাইন সিগন্যাল স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদাকে গুরুত্ব প্রদান; হুইল চেয়ার ব্যবহারকারির জন্য ফুটপাতে ঢালুপথ (র্যাম্প) তৈরি করা; দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহার উপযোগী করে ফুটপাতে টেকটাইল্স স্থাপন করা; অবকাঠামো নির্মাণ দ্বারা পথচারীর নিরবিচ্ছিন্ন চলাচলে কোন বাধাগ্রস্ত না করা; ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং ফুটপাত ও সড়কে অবৈধ পার্কিং বন্ধ; ফুটপাতে হকারদের ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসা; যেখানে পথচারী চলাচলের ঘনত্ব বেশি সেখানে কেবলমাত্র পথচারীগণের জন্য সড়ক (
pedestrian-only road) ব্যবস্থা চালু করা; ইত্যাদি সুপারিশ তুলে ধরেন।
আয়োজনে আরো উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাইস্কুল, ডাব্লিউডিডিএফ, প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় পরিষদ, এসডিএসএল, টিম ইনক্লুশন বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, সিসিএবি, বিওয়াইসিএন, দি ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এর কর্মকর্তাবৃন্দ।