বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবসে রোগ ও মৃত্যহ্রাসে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবিতে- ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট ও বিআরসিটি’র যৌথ আয়োজনে অবস্থান কর্মসূচি বিদ্যমান আইনের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো পরোক্ষ বিজ্ঞাপনসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা কার্যক্রমের মাধ্যমে যুব সমাজকে ধূমপানে আকৃষ্ট করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তামাক কোম্পানির এ ধরনের কার্যক্রমের ফলে ধূমপায়ীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশকে তামাকজনিত রোগ ও মহামারীর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তামাকজনিত রোগ ও মৃত্যহ্রাসে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন জরুরি। ১৫ মার্চ ২০১২ সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট ও বিআরসিটি’র যৌথ আয়োজনে অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা এ দাবি জানায়।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এ্যডভোকেসী অফিসার সৈয়দা অনন্যা রহমান এর পরিচালনায় অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন গ্রীনমাইন্ড সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক আমির হাসান, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের তরুণকর্মী অদুত রহমান ইমন, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী, জালালবাদ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এনাম আহমেদ, জনগনের ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, বাংলাদশ পীস মুভমেন্ট এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রফেসর কামাল আতাউর রহমান, ইউথ লিডার বিধান চন্দ্র পাল, বিআরসিটি এর স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক (প্রোগ্রাম ও প্ল্যান) এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, প্রমুখ।
আইনভঙ্গ করে বিজ্ঞাপন প্রচারের অভিযোগ তুলে তামাক কোম্পানির শাস্তির দাবি করে বক্তারা বলেন, কিশোর ও তরুন প্রজন্মকে ধূমপানের নেশা থেকে বিরত রাখতে আইনে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু কোম্পানিগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা ধরনের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশের তরুণ প্রজন্মকে ধুমপানে উৎসাহী করতে বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছে। নাটক সিনেমায় ধূমপানের দৃশ্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের তরুণ সমাজকে রক্ষায় তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন।
বক্তাদের মধ্যে আমির হাসান বলেন, কোম্পানীগুলো বিভিন্ন প্রোলোভন দেখিয়ে কৃষদের তামাক চাষের দিকে আকৃষ্ট করছে, ফলে দেশের অনেক ফসলী জমিতে তামাক চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে, দ্রুত তামাক চাষ বন্ধে কার্যকর তিনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অদুত রহমান ইমন সচিত্র স্বাস্থ্যসতর্কবানীর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর। এ সকল জনসাধারণকে তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান করতে হবে। পৃথিবীর উন্নত দেশে কোম্পানিগুলো সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান করলেও, বাংলাদেশে প্রদান করছে না। এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, কোম্পানীগুলো আইন অমান্য করার পাশাপাশি আইনের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিত্যনতুন কৌশলে মানুষকে নেশাগ্রস্থ করার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। আইনের দূর্বলতা দুর ও তামাক কোম্পানীগুলোর নিত্যনতুন কার্যক্রম বন্ধ করতে আইন উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।
এনাম আহমেদ বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা কোম্পানিগুলোর এমন একটি কার্যক্রম যার মাধ্যমে তারা নিজেদের অপকর্মকে আড়াল করে থাকে। এ সকল কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা মানুষের সহানুভুতি আদায় করছে। তামাক কোম্পানীগুলো এ কার্যক্রম করেই ক্ষান্ত নয়, বিভিন্ন কুটকৌশলে নীতি নির্ধারক ও প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদেরও প্রভাবিত করছে। সরকারের কর্মকর্তাদের কোম্পানিগুলোর সাথে কিভাবে কার্যক্রম করবে সে বিষয়ে সুপষ্ট নীতি থাকা প্রয়োজন। এধরনের নীতি তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সরকারের নীতিকে কোম্পানির প্রভাবমুক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
বক্তারা আরো বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের কারণে প্রতিবছর ৫৭,০০০ মানুষের মৃত্যু ও ৩,৮২,০০০ মানুষের পঙ্গুত্ব বরণ করে এবং ১১,০০০ কোটি টাকা চিকিৎসা খাতে ব্যয় করতে হচ্ছে। তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার জনিত কারনে রোগ মৃত্যু ও চিকিৎসা খাতে রাজস্ব ব্যায় হ্রাসে সরকারকে নীতি গ্রহনে কঠোর পদক্ষেপ এর মাধ্যমে আইনটি সংশোধন করা জরুরী। জনপ্রতিনিধিদের অবিলম্বে এই আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।