বর্তমানে সংকটে ভুগছে দেশের জ্বালানি খাত, ফলে স্থানীয় পর্যায়ে সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখা, সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ির তেলের বরাদ্দ হ্রাস, একই গাড়িতে একাধিক কর্মকর্তার অফিস যাতায়াতে উৎসাহিত করাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেছে। সম্প্রতি এলজিআরডি থেকে ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে অফিসের বাসে যাতায়াতের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এমতাবস্থায় সামগ্রিকভাবে নগরীতে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন সম্ভব বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন পরিবেশবাদীরা।
আজ ৩০ জুলাই ২০২২, সকাল ১১.০০ টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র, রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুল, ছায়াতল বাংলাদেশ, দি ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ কারফ্রি সিটিস এলায়েন্স বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইউথ ক্লাইমেট নেটওয়ার্ক এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত ‘জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হোক’ শীর্ষক কর্মসূচিতে বক্তারা এ কথা বলেন। ক্যাম্পেইন থেকে সকলকে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।
প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ এর সভাপতিত্বে এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ মিঠুনের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের সভাপতি ও সিইও মাহবুবুল হক, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী, প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আকতার, রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তাহাজ্জোত হোসেন, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এমএ মান্নান মনির, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম নুরুল ইসলাম, দি ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ-এর পলিসি অফিসার আনম মাছুম বিল্লাহ ভুঁঞা, কারফ্রি সিটিস এলায়েন্স বাংলাদেশের সুমাইয়া তাবাছ্ছুম সুহী, বাংলাদেশ ইউথ ক্লাইমেট নেটওয়ার্কের মাহমুদুল হাসানসহ আরো অনেকে। এছাড়াও আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন ছায়াতল বাংলাদেশ, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-এর কর্মকর্তাবৃন্দ।
সভায় বক্তারা বলেন, সম্প্রতি জ্বালানি সংকট বিবেচনায় সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে অফিস বাস ব্যবহারের নির্দেশনা প্রদান করেছে। আমরা সরকারের এ সকল উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি এ উদ্যোগসমূহের কঠোর বাস্তবায়ন ও মনিটরিং নিশ্চিতের আহ্বান জানাই।
বক্তারা আরো বলেন, শুধুমাত্র জ্বালানি অপচয় নয়, ব্যক্তিগত গাড়ির অধিক ব্যবহারের ফলে যানজট, শব্দ ও বায়ুদূষণ, দূর্ঘটনাসহ বিভিন্ন সমস্যা বৃদ্ধি পায়। অধিক জ্বালানি খরচের মাধ্যমে নগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জলবায়ু বিপর্যয়ের আশঙ্কাও বেড়ে চলেছে। ব্যক্তিগত গাড়ির পার্কিং সুবিধা দিতে গিয়ে হেঁটে যাতায়াত, সামাজিকীকরণের সুযোগ থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছেন। জনগণের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সামগ্রিকভাবে নগর যাতায়াতে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। ঢাকা শহরে অধিকাংশ মানুষ হেঁটে যাতায়াত করে থাকেন। তাদের সুবিধার কথা বিবেচনায় হাঁটা, সাইকেল ও গণপরিবহনে যাতায়াতের নিরাপদ ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা আবশ্যক।
মানববন্ধন থেকে বক্তারা ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা; স্বল্প দূরত্বে হেঁটে, সাইকেলে ও রিকশায় যাতায়াতের উপযোগী অবকাঠামো তৈরি করা; যাতায়াতের ক্ষেত্রে গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা করা; পথচারীর উপযোগী করে ফুটপাত নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা; সপ্তাহে একদিন ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করা; ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে আমদানী কর বৃদ্ধি; ব্যক্তিগত গাড়িবান্ধব অবকাঠামো (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার) নির্মাণ থেকে বিরত থাকা; ইত্যাদি সুপারিশ তুলে ধরেন।