সুস্থতা নিশ্চিতে নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্প নেই। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নগরবাসীর জন্য নিরাপদ খাবার নিশ্চিতের লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো কৃষি নির্ভর হওয়ায় অন্যান্য সিটির তুলনায় গাজীপুরে তাজা শাক সবজি ও ফলমূল এর সরবরাহ বেশি। তারপরও মধ্যসত্ত্বভোগীদের প্রভাবে এবং সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থার অভাবে কৃষক সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না এবং ক্রেতাগণ সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ খাদ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের আওতায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে দুটি কৃষকের বাজার স্থাপিত হতে যাচ্ছে, যেখানে কৃষক মধ্যস্বত্বভোগীদের অনুপস্থিতিতে সরাসরি তার উৎপাদিত নিরাপদ পণ্য ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেবেন। কৃষকের বাজারে প্রতি সপ্তাহে একদিন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক যাচাইকৃত ১০জন কৃষক তাদের উৎপাদিত নিরাপদ পণ্য ক্রেতাদের কাছে সরাসরি বিক্রি করবেন।
আজ ৫ জুলাই ২০২২ সকাল ১১.০০ টায় গাজীপুরের প্রকৌশল ভবন মিলনায়তনে এ্যাম্বেসি অব দি কিংডম অব নেদারল্যান্ডস, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত ‘গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে এলাকাভিত্তিক কৃষকের বাজার স্থাপন ’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রারম্ভিক সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সচিব মোঃ আব্দুল হান্নান। বক্তব্য রাখেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড নং ৫৪ এর কাউন্সিলর মো; নাসির উদ্দিন মোল্লা, প্যানেল মেয়র মোসা: আয়েশা আক্তার, অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফিরোজ আল মামুন, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো: মঈনুল ইসলাম, পরিকল্পনাবিদ সানজিদা হক, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: সাইফুল ইসলাম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. কায়সার মুহাম্মদ মঈনুল হাসান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. এস এম উকিল উদ্দিন, সিনিয়ির উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জান্নাতুল শাহীন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাসিবুল হাসান, বিপণন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুস সালাম, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার স্পেলালিষ্ট জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ফুড সিটি কো অর্ডিনেটর মোঃ শহীদুল ইসলাম এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ এর পরিচালক গাউস পিয়ারী। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান এবং মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আক্তার।
মোঃ আব্দুল হান্নান বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে গাজীপুর ২৮ ও ৫৪ নং ওয়ার্ডে পরীক্ষামূলক কৃষকের বাজার হতে যাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের স্থায়ী বাজারের সাথে কৃষকের বাজারগুলো সম্পৃক্ত করা হলে বাজারগুলো টেকসই করা যাবে। সিটি কর্পোরেশন এবং কাউন্সিলর অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে। কৃষকের বাজারের সফলতা-ব্যর্থতা, চ্যালেঞ্জ বিষয়ে নিয়মিতভাবে সিটি কর্পোরেশনকে অবহিত করার অনুরোধ করছি।
ড. এস এম উকিল উদ্দিন বলেন, যেহেতু আয়োজনটি সপ্তাহে একদিন, তাই কৃষকের বাজারে পণ্য সরবরাহ করলে খামারীরা সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। তবুও পণ্য সরবরাহ নিশ্চিতের লক্ষ্যে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে। কায়সার মুহাম্মদ মঈনুল হাসান বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি, পয়:নিষ্কাশন সুবিধা ছাড়া কৃষকের বাজারে মাছ বিক্রি করা কঠিন। পণ্য পরিবহনের জন্য ফ্রিজিং ভ্যান প্রয়োজন। বড় খামারী নয়, বরং কন্ট্রাক্ট কৃষকদের এ কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
মো: হাসিবুল হাসান বলেন, আমরা কৃষকদের নিরাপদ চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং সহায়ক উপকরণ প্রদান করি। কিন্তু এগুলো সবই প্রকল্প নির্ভর। নিরাপদ চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে হলে এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ প্রয়োজন। কৃষকের বাজার কার্যক্রমের আওতায় কৃষকদের সহায়ক উপকরণ প্রদান করা হলে কৃষকগণ উপকৃত হবেন। মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, কৃষকের বাজার সপ্তাহে অন্তত দুই দিন আয়োজিত হলে কৃষকগণ বেশি উপকৃত হবেন। আমাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কৃষক ভার্মি কম্পোস্ট, জৈব সার, জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করেন। তাদের কৃষকের বাজার কার্যক্রমে সহজেই সম্পৃক্ত করা সম্ভব।
মো: আব্দুস সালাম বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে স্থান নির্ধারণের মাধ্যমে কৃষকের বাজার কার্যক্রমটিকে স্থায়ী একটি উদ্যোগে পরিণত করা হলে এটিকে টেকসই করা যাবে এবং প্রয়োজনীয় সকল সুবিধাদি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। মোঃ মঈনুল ইসলাম বলেন, ২৮ ও ৫৪ নং ওয়ার্ড কৃষক বাছাই এবং স্থান বাছাই এর মানদন্ড অনুযায়ী উপযোগী। তবে কৃষকের বাজারে ব্যবহৃত সরঞ্জাম এবং কৃষকের পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মো: ফিরোজ আল মামুন বলেন, সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কৃষক ও ভোক্তা পর্যায়ে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।
মোসা. আয়েশা আক্তার ২৮ নং ওয়ার্ডে কৃষকের বাজার স্থাপনের ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। মোঃ নাসির উদ্দিন মোল্লা বলেন, কৃষকের বাজার আয়োজন, ব্যবস্থাপনা ও সুবিধাদি নিশ্চিতের ক্ষেত্রে কাউন্সিলর অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তবে পণ্যগুলো আবশ্যিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এলাকার মধ্যে মাছ বিক্রি কঠিন তবে মাংস, ডিম, দুধ সহজেই বিক্রি করা সম্ভব। তিনি ৫৪ নং ওয়ার্ডে কয়েকটি বিদ্যালয় ও উন্মুক্ত স্থান কৃষকের বাজার স্থাপনের বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেন।
আয়োজনে আরো উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো রেজাউল করিম, পরিকল্পনাবিদ সুমনা শারমিন, গাজীপুর এলআইইউপিসি’র টাউন ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কমিউনিটি ট্রেনিং এ্যাসিস্টেন্ট লায়লা আকতার, বাপা’র গাজীপুর শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট মো সালমান, বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দসহ আরো অনেকে।