প্রাচ্যের ড্যান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জ শহরের উন্নয়ন এবং নগরবাসীর প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় নগরবাসীর নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা নিশ্চিতের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় স্থাপিত হতে যাচ্ছে দুটি কৃষকের বাজার। এ বাজারে কৃষকগণ সরাসরি তার নিরাপদ খাদ্যপণ্য ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেবেন, যা নগরবাসীর পুষ্টির চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি কৃষকের বাজার ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীরা অনুপস্থিত থাকায় কৃষকরাও আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে স্থাপিত হতে যাচ্ছে ২ টি কৃষকের বাজার, যেখানে প্রতি সপ্তাহে একদিন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক যাচাইকৃত ১০জন কৃষক তাদের উৎপাদিত নিরাপদ পণ্য ক্রেতাদের কাছে সরাসরি বিক্রি করবেন।
আজ ৩০ জুন ২০২২ সকাল ১১.০০ টায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সভাকক্ষে এ্যাম্বেসি অব দি কিংডম অব দি নেদারল্যান্ডস, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে এলাকাভিত্তিক কৃষকের বাজার স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রারম্ভিক সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
সভায় বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড নং ১২ এর কাউন্সিলর মোঃ শওকত হাসেম, ওয়ার্ড নং ১৫ এর কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ^াস, ওয়ার্ড নং ১০,১১,১২ এর সংরক্ষিত আসনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিনোয়ারা বেগম, ওয়ার্ড নং ১৩,১৪,১৫ এর সংরক্ষিত আসনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর শারমিন জাহান, প্রধান সমাজ কল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা কে এম ফরিদুল মিরাজ, নগর পরিকল্পনাবিদ মো মঈনুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো আয়নাল হক, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বাসনা আখতার, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রোকেয়া আক্তার, নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষি অফিসের অতিরিক্ত উপপরিচালক তাজুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ এলআইইউপিসির-ইউএনডিপি’র টাউন ম্যানেজার মোঃ মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সহসভাপতি তারিক বাবু, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ফুড সিটি কো-অর্ডিনেটর মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, সাসটেইনেবেল এগ্রিকালচার স্পেশালিস্ট জাহাঙ্গীর আলম, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান এবং মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আক্তার।
কেএম ফরিদুল মিরাজ বলেন, বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পিছিয়ে আছে। ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্প নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতে কাজ করছে। এর আওতায় কৃষকের বাজার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। মাননীয় মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ওয়ার্ড ১২ এবং ১৫ কে কৃষকের বাজার স্থাপনের জন্য চিহ্নিত করেছেন। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর মহোদয়দের সহযোগিতায় এ কার্যক্রমকে সফল ও টেকসই করা সম্ভব।
আয়নাল হক বলেন, মাছকে কৃষকের বাজারে সম্পৃক্ত করা কঠিন। ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবহন ও সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনায় স্বল্প পরিমাণে কৃষকের বাজারে মাছ বিক্রি করা যেতে পারে। বাসনা আখতার বলেন, কৃষকের বাজারে পণ্যের নিশ্চয়তা দেয়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আমরা খামারী দেবো এবং তাদের সার্টিফাই করবো নিরাপদ খামারী হিসেবে। তবে খামারীদের পণ্য পরিবহনের জন্য প্রাথমিকভাবে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনকে দায়িত্ব গ্রহণে সম্পৃক্ত করতে হবে।
রোকেয়া আক্তার বলেন, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে আমি কৃষকদের তাদের লাভের বিষয়টি বোঝাবো এবং তাদের কৃষকের বাজারে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করবো। পণ্যের মান নিশ্চিতের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিরাপদ চাষীদের বাছাই করে দিতে হবে। তাজুল ইসলাম বলেন, কৃষকের বাজারে ভোক্তাবলী, বন্দর থেকে কৃষিপণ্য নিয়ে আসা যেতে পারে। তবে কৃষকদের পরিবহন ব্যবস্থা দেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি তাদের জৈব বালাইনাশক, জৈবসারসহ বিভিন্ন উপকরণ সহায়তা প্রদান করতে হবে। কৃষকের জন্য যথাযথ লাভ যদি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে বাজারটি টেকসই হবে।
মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, কৃষকের বাজার বিষয়ে যথেষ্ট প্রচারণা প্রয়োজন এবং প্রতি সপ্তাহে বাজারের সুবিধা-অসুবিধা বিষয়ে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। মঈনুল ইসলাম বলেন, কৃষকদের বাজারের কার্যক্রম শেষ হয়ে যাওয়ার পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যথাযথ হওয়া প্রয়োজন। নিরাপদ পণ্যের পুষ্টি গুণ সম্পর্কে ভোক্তাদের সচেতন করা হলে পণ্যের দাম কিছুটা বেশি হলেও তারা পণ্য ক্রয়ে আগ্রহী হবে।
মোঃ শওকত হাসেম বলেন, কৃষকের বাজারে পণ্যের বৈচিত্র্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন নতুবা জনগণ নিরুৎসাহিত হবেন। ভোক্তাদের জন্য নিরাপদ পণ্যের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হলে কৃষকের পণ্যের ক্ষতি হবে না। যত দ্রুত সম্ভব কৃষকের বাজার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাই। অসিত বরণ বিশ^াস বলেন, অর্গানিক পণ্য নিশ্চিত করা কঠিন কিন্তু বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি নিশ্চিত করা যায় সহজেই। কাউন্সিলর অফিসের পক্ষ থেকে জায়গা দেয়া, কৃষকদের সুবিধাদি প্রদান, বাজার মনিটরিং, জনগণের সচেতনতা নিশ্চিত করতে পারবো। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষক ও পণ্যের মান নিশ্চিত করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনকে সম্পৃক্ত করা হলে এবং সিটি কর্পোরেশন দায়িত্ব গ্রহণ করলে কৃষকের বাজারকে টেকসই করা সম্ভব।