তামাক কোম্পানী থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহারের দাবীতে একুশে বইমেলা প্রাঙ্গনে ক্যাম্পেইন
ঢাকার সোহ্রাওর্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত বাংলা একাডেমির একুশের বইমেলা প্রাঙ্গণে প্রতিদিন নানা বয়সী শিশু, নারী-পুরুষ এবং অধূমপায়ী জনগনের ব্যাপক সমাগম ঘটছে। শুধুমাত্র জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নয় বইমেলার নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে এ স্থানটি ১০০% ধূমপানমুক্ত হওয়া জরুরী। তামাকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতি থেকে জনসাধারণকে রক্ষায় সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি মেলার নিরাপত্তা বিধানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং বাংলা একাডেমীর সমন্বিত উদ্যোগে মেলা প্রাঙ্গনে লাইটার এবং সিগারেট নিয়ে প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি বাস্তবায়নে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলা একাডেমীর উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসার দাবীদার।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। প্রত্যয় অনুসারে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক নীতিসুমহ সুরক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। তামাক কোম্পানীতে সরকারের শেয়ার থাকার সুযোগ গ্রহণ করে তামাক কোম্পানীগুলো দীর্ঘদিন যাবত নানাভাবে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক নীতি প্রণয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে কাংখিত লক্ষ্য অর্জনে এফসিটিসি অনুসারে তামাক কোম্পানী থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার এবং সুনিদিষ্ট আচরণবিধি প্রণয়ন জরুরী। আজ ১৫ মার্চ ২০২২ বিকেল ৪ টায় বইমেলা প্রাঙ্গনে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, ডাব্লিউবিবি ট্্রাস্ট ও প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের উদ্যোগে একটি অবস্থান কর্মসূচী ও লিফলেট বিতরণ ক্যাম্পেইনে এ দাবী জানানো হয়। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ এর নেতৃত্বে উক্ত ক্যাম্পেইনে এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক সাগুফতা সুলতানা, ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (আইডিএফ) এর নির্বাহী পরিচালক শফিউল আযম, কান্দিভিটা সমউন্নয়ন মহিলা সমিতির(কসমস) নির্বাহী পরিচালক মেহনাজ পারভীন মালা, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা সামিউল হাসান, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের কর্মকর্তা তাহমিনা হামিদ, ডাস্ এর কর্মকর্তা এইচ আর ইমরানসহ তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত অন্যান্য সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
হেলাল আহম্দে বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং মেলার নিরাপত্তা বিধানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং বাংলা একাডেমীর মেলা প্রাঙ্গন ধূমপানমুক্ত রাখার সমন্বিত উদ্যোগ প্রশংসার দাবী রাখে। ক্ষতিকর পণ্য তামাকের কারণে বাড়ছে অসংক্রামক রোগ ও মৃত্যুর সংখ্যা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয় বাস্তবায়নে সময় রয়েছে মাত্র আঠারো বছর। এই সময়ের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার এবং সরকারি কর্মকর্তাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
সাগুফতা সুলতানা বলেন, তামাক ক্যান্সার, অসংক্রামক রোগ ও বিভিন্ন শ^াস-প্রশ^াসজনিত রোগের পাশাপাশি কোভিড-১৯ এর মতো সংক্রামক ব্যাধির ব্যাপক বিস্তার ঘটাচ্ছে। এসব রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তামাকের কারণে সৃষ্ট মৃত্যুঝুঁকি থেকে সকল বয়সী জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষিত রাখতে সরকার সহায়ক নীতি তৈরী ও বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে কিন্তু এসকল ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে তামাক কোম্পানী।
শফিউল আযম বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে তামাকের ব্যবহার কমানো। অন্যদিকে তামাক কোম্পানিগুলোর উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন ও ব্যবসার সম্প্রসারণ। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সরকার ও তামাক কোম্পানির উদ্দেশ্য ও নীতি সম্পূর্ণ বিপরীত।
সামিউল হাসান বলেন, তামাক কোম্পানির অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী (এনটিসিপি) চূড়ান্ত করে জনস্বাস্থ্যকে তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।