রায়েরবাজার এলাকায় প্রায় ৯৫% শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াত করে। কিন্তু নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ পরিবেশ না থাকায় সড়ক দূর্ঘটনাসহ প্রতিনিয়ত তাদের নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর সুবিধার কথা বিবেচনায় রায়েরবাজার এলাকায় হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রতিটি বয়স ও সামর্থ্যরে মানুষ উপকৃত হবেন। আজ ২০ মার্চ ২০২২ সকাল ১১.০০ টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুল ও ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত “বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
সভায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জনাব শেখ মোহাম্মদ হোসেন খোকন এবং সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম. এ মান্নান মনির, ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্ট ও একাডেমিক আহমাদ আল মুহাইমিন। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ এবং নাঈমা আফরিন।
বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষার্থী সহায়তায় হেঁটে যাতায়াতের সমস্যা এবং সম্ভাব্য সমাধান চিহ্নিত করে তিনটি নকশা প্রস্তুত করে। তিনজন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান। তার বিদ্যালয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান নকশার মাধ্যমে চিহ্নিত করে মূল প্রবন্ধে শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষার্থীরা যাতে নিরাপদে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে পারে সেজন্য বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান প্রয়োজন। রাস্তায় আবর্জনা, অপরিকল্পিত বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন, রাস্তার পাশে অবৈধ পার্কিং, দোকানের মালামাল, নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখার কারণে শিক্ষার্থীরা হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াতে স্বচ্ছন্দবোধ করে না। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য ফুটপাত দখল প্রতিরোধ করা, হকার ব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক সাইন স্থাপন, বিদ্যালয়ের সামনে গতিরোধক, জেব্রা ক্রসিং প্রদানসহ ইত্যাদি উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক।
আয়োজনের প্রধান অতিথি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জনাব শেখ মোহাম্মদ হোসেন খোকন বলেন, রায়েরবাজার এলাকায় বিভিন্ন ধরণের সমস্যা রয়েছে। প্রয়োজনীয় রাস্তা ছেড়ে দিয়ে বাড়ি নির্মাণ না করায় রাস্তাগুলো অত্যন্ত অপ্রশস্ত হয়ে গেছে, যার ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। তাহলেই কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যাবে। জলাবদ্ধতা রোধে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি ২০২৩ সাল থেকে এলাকাবাসীর ভোগান্তি অনেকটাই দূর হবে।
আয়োজনে অন্যান্য বক্তারা বলেন, পথচারীবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য অনেকগুলো অংশীদার আছে। যেমন- সিটি কর্পোরেশন, বিদ্যুৎ বিভাগ, ওয়াসা, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ইত্যাদি। এ প্রতিটি সংস্থার সমন্বয়ের সাধনের মাধ্যমে পথচারীবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সচেষ্ট হতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য যদি হেঁটে যাতায়াতের পথ নিরাপদ হয়, তাহলে প্রতিটি এলাকাবাসী উপকৃত হবেন। আমাদের এলাকায় বিভিন্ন ধরণের সমস্যা থাকে। এলাকাবাসী সচেতন হলে কিছু সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। যেমন- যত্রতত্র আবর্জনা ফেলার কারণে হাঁটার পরিবেশ অস্বচ্ছন্দ হয়ে পড়ে। এভাবে যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকলে এ সমস্যা অনেকটাই সমাধান হবে। যারা অবৈধভাবে ফুটপাতে দোকানের মালামাল রাখেন বা পার্কিং করে রাখেন, তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তাদের এমন আচরণের জন্য শুধু এলাকাবাসী নয়, তাদের নিজেদের সন্তান-আত্মীয়-পরিজনও দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে পারে। সরকারের পাশাপাশি এলাকাবাসীর সচেতনতার মধ্য দিয়ে পথচারীবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।
মতবিনিময় সভায় স্থানীয় এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন।