বায়ুদূষণ এখন মারাত্মক পরিস্থিতিতে রুপ নিয়েছে। বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা। ধূলাদূষণ, ইটভাটা ও যানবাহনে নিম্নমানের জ্বালানী ব্যবহারের ফলে নির্গত ধোঁয়া বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশে ইটভাটায় জ্বালানী হিসেবে নিম্নমানের কয়লা ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে যানবাহনের জ্বালানী হিসেবে অত্যন্ত নিম্নমানের ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল ব্যবহার করা হয়। এতে ধোঁয়া বেশি হয় এবং বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ কাজ, সমন্বয়হীন সংস্কার কাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ইত্যাদি ধূলাদূষণের প্রধান কারণ। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, এলার্জি, কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যাথা, ফুসফুসে ক্যান্সার, শুক্রানুর ক্ষতি, জন্মগত ত্রুটি, স্ট্রোকের ঝুঁকি, কিডনির রোগ, হার্ট এটাক, মানসিক সমস্যা, হতাশা, বিষাদ, অস্থিরতা এবং অন্যান্য নেতিবাচক অনুভূতির প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
ধূলাদূষণের উৎস চিহ্নিত করে ধূলাদূষণ বন্ধ করার কার্যকর পদক্ষেপ এবং দেশে জ্বালানী হিসাবে ব্যবহত নিম্নমানের কয়লা আমদানী বন্ধ করা ও তরল জ্বালানী হিসেবে নিম্নমানের ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল বাজারের যাতে বিক্রি না হতে পারে তার কার্যকারী ভূমিকা পালনের দাবীতে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টসহ সমমনা ১৬ টি সংগঠন- মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদ, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগ, বিডি ক্লিক, পরিবেশ উনড়বয়ন সোসাইটি, গ্রিনফোস, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশন, সুবন্ধন সামাজিক কল্যাণ সংগঠন, বানিপা, জাতীয় সচেতন ফ্উান্ডেশন(জাসফা), পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, মৃত্তিকা, পরিস্কার ঢাকা, বারসিক এর যৌথ উদ্যোগে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, শনিবার, সকাল ১১ টায় শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের সামনে " বর্তমানে জনস্বাস্থ্যের প্রধান হুমকি বায়ুদূষণ; বায়ুদূষণ রোধে ধূলাদূষণ বন্ধ কর ও জ্বালানীর মান উন্নয়ন কর" শীর্ষক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌ. মো. আবদুস সোবহান -এর সভাপতিত্বে উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাপরিচালক মাহবুল হক, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগ এর সভাপতি নাজিমউদ্দীন, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদের সভাপতি মো: মুসা, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ’র সভাপতি আমির হাসান মাসুদ, বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্ট এর প্রধান সমন্বয়ক রোজিনা আক্তার, পরিবেশ উনড়বয়ন সোসাইটির সাধারন সম্পাদক মেনন চৌধুরি, সুবন্ধন সামাজিক কল্যাণ সংগঠন এর সভাপতি মো: হাবিবুর রহমান হাবিব, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশন এর মুখপাত্র মো: ইমরান হোসেন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রোজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান লিটু, এইচ আর ডিপার্টমেন্ট এর বিভাগীয় প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমান, মৃত্তিকা’র সমন্বয়ক খাদিজা খানম, জাতীয় সচেতন ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনির, গ্রিনফোর্স’র সদস্য মো: ইসমাইল রাকিব প্রমুখ।
ঢাকায় বায়ু দূষণ না থাকলে একজন নাগরিক আরও প্রায় সাত বছর সাত মাস বেশি বাঁচতে পারতো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭২ বছর ছয় মাস। লাইফ ইনডেক্সের গবেষণার মতে, ১৯৯৮ সালে বায়ু দূষণের কারণে গড় আয়ু কমেছিল প্রায় দুই বছর আট মাস, ২০১৯ সালে সেটি পাঁচ বছর চার মাসে দাঁড়িয়েছে। গবেষণায় বলছে, সারা দেশের ৬৪টি জেলার প্রত্যেকটিতেই বায়ু দূষণের হার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী অন্তত তিন গুণ বেশি। বায়ুদূষণ রোধ করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। অতিদ্রুত আইনানুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি সহ পরিবেশ বিপর্যয় ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।