ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত গণপরিসর-মাঠ-পার্ক নেই। বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের শারীরিক কার্যক্রমের চাহিদা পূরণ হতে পারে। কিন্তু যানবাহনের বেপরোয়া গতি, ভাঙ্গাচোড়া ফুটপাত, রাস্তা পারাপারে বিদ্যালয়ের জেব্রাক্রসিং ব্যবস্থা না থাকা, ফুটপাতে অবৈধ পার্কিং, হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ না থাকায় অনেকেই সন্তানদের হেঁটে যাতায়াতে উৎসাহী হন না। এ অবস্থায় সন্তানদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে নিরাপদে হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ নিশ্চিতের পর্যাপ্ত জেব্রাক্রসিং ও ফুটপাতমুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ এর অভিভাবকগণ।
৮ জানুয়ারী ২০২২, সকাল ১১.০০ টায়, সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ, মালিবাগ শাখা, এ্যাস্ট্রাজেনেকা, পল্লীমা সংসদ, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজে আয়োজিত ‘অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে অভিভাবকদের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় অভিভাবকগণ এ দাবি জানান।
নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ময়নার সভাপতিত্বে এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়ির প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আকতার। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের কো-অর্ডিনেটর সোলায়মান কবীর, বিদ্যালয়ের অভিভাবক এটিএম মশিউর রহমান, কাজী সোহেল রানা, আফরোজা আকতারসহ প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, ঢাকা শহরে নিরাপদে হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ না থাকায় অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ির দিকে ঝুঁকে পড়ায় যানজট, দূষণ, দুর্ঘটনা ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়। শহরের অধিকাংশ মানুষ হেঁটে যাতায়াত করলেও যাতায়াতের পরিবেশ তাদের জন্য আরো অনিরাপদ হয়ে পড়ে। এ শহরে মাঠ-পার্কের অপ্রতুলতা রয়েছে। বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াত শিক্ষার্থীদের শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যম হতে পারে। কিন্তু সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবে তারা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার যে সকল শিক্ষার্থীরা গাড়িতে যাতায়াত করে অধিক সময় যানজটে বসে থাকায় তাদের উপর থাকায় মানসিক চাপ তৈরি হয়। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায় বহুগুণে।
বক্তারা আরো বলেন, বর্তমানে শিশুরা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের দিকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এ ধরণের খাবারের আকর্ষণীয় মোড়ক, স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবারের তুলনায় কম মূল্য, সহজলভ্যতা ইত্যাদি এর অন্যতম কারণ। পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাবারের অনিয়ন্ত্রিত বিজ্ঞাপন প্রচারের ফলে তারা এ ধরণের খাবারে আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। এ ধরণের খাদ্যের ব্যবহার যে শুধুমাত্র শরীরের জন্য খারাপ তা নয়, অতিরিক্ত প্লাস্টিক দূষণ আমাদের পরিবেশের জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকর। ভবিষ্যত প্রজন্মের কল্যাণ বিবেচনায় কোমল পানীয়, ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড, প্যাকেটজাত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থেকে স্বাস্থ্যকর খাবার অর্থাৎ শাকসবজি-তাজা ফলমূল ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে।
অভিভাবকগণ বলেন, উন্নত বিশে^র নগর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সুবিধা বিবেচনায় হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াতের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলার দিকে মনোযোগী হয়েছেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদে হেঁটে যাতায়াত করতে পারে সেজন্য চার্টার আছে। ঢাকা নগর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও এ ধরণের কার্যক্রম গৃহীত হলে নগরবাসী উপকৃত হবেন এবং শিশু-কিশোরদের বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে এলাকাভিত্তিক খেলাধূলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টি করা হলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে ভ‚মিকা রাখবে। সর্বোপরি, অভিভাবকদের দায়িত্বশীল আচরণ সব থেকে বেশি গুরত্বপূর্ণ। সন্তানদের মধ্যে সুঅভ্যাস গড়ে তোলায় তাদের সচেষ্ট হতে হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকেও আইন প্রয়োগে কঠোর ভূমিকা পালন প্রয়োজন।