অপরিকল্পিত ও দ্রত নগরায়নের ফলে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের উপর অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। নগরবাসীর মধ্যে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। বিশেষত শহরে মাঠ-পার্ক-গণপরিসরের অভাবে পর্যাপ্ত শারীরিক কার্যক্রমের সুযোগ না থাকায় শিশুরা অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ১১-১৭ বছর বয়সের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ শিশু শারীরিক কার্যক্রমে সক্রিয় নয়। বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় শারীরিক কার্যক্রমের চাহিদা পূরণ সম্ভব। পাশাপাশি হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে সংঘটিত ট্রিপের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে যান্ত্রিক যানের ব্যবহার কমিয়ে আনা হলে বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। এতে দূষণজনিত বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ হ্রাসের পাশাপাশি জলবায়ু বিপর্যয়ও প্রতিরোধ করা সম্ভব। হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ পরিবেশ না থাকা স্বত্তে¡ও ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রায় ৯৫ শতাংশ বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াত করে। সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ পরিবেশ নিশ্চিত করা হলে সকল এলাকাবাসী উপকৃত হবেন। ১৮ নভেম্বর ২০২১, বৃহষ্পতিবার সকাল ১১:৩০ টায় কচিকন্ঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মুখে “অসংক্রামক রোগ হ্রাসে এলাকাভিত্তিক বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ চাই” শীর্ষক সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
কর্মসূচিতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা নাঈমা আকতার বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা প্রয়োজন। বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াত শিক্ষার্থীদের শারীরিক পরিশ্রমের চাহিদা পূরণের একটি সহজ সমাধান হতে পারে। কিন্তু ভাঙ্গাচোড়া রাস্তা, জলাবদ্ধতা, গাড়ির অতিরিক্ত গতি, হর্ন ইত্যাদির কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতে নিরুৎসাহিত হয়। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াত নিশ্চিতের লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সচেষ্ট হতে হবে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, রায়েরবাজার এলাকার ৫ টি বিদ্যালয়ে একটি জরিপ করে দেখা গেছে, এ এলাকার অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াত করে, কিন্তু তাদের জন্য সুষ্ঠু হাঁটার পরিবেশ নেই। এলাকার সকল রাস্তা একই রকম নয়। রাস্তার প্রশস্ততা এবং পারিপার্শিক অবস্থা বিবেচনা করে কিছু রাস্তায় শুধু পথচারীদের চলাচলের জন্য নির্ধারন করা, কিছু রাস্তা পথচারী এবং যানবাহন উভয় চলাচলের জন্য, কিছু রাস্তা সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা এবং কিছু রাস্তা পথচারী এবং অযান্ত্রিকযান চলাচলের ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষার্থীদের হাঁটার পরিবেশ নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে।
ধানমন্ডি কচিকন্ঠ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এইচ এম নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আমরা হেঁটে যাতায়াতে উৎসাহিত করি। এর মাধ্যমে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি অর্থ সাশ্রয় হয় এবং পরিবেশ দূষণ হ্রাস পায়। এলাকায় হাঁটার পরিবেশ ঠিক রাখতে সকল স্তরের মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এলাকাবাসী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। ঢাকা শহরের হাঁটার পরিবেশ উন্নয়নে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন প্রয়োজন।
কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর কর্মকর্তাবৃন্দ, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ বিদ্যলয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।