অসংক্রামক রোগ থেকে দূরে থাকতে বিদ্যালয়ে হেঁটে যেতে চায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ পরিবেশ না থাকায় অনেকেই গাড়ি অথবা রিকশার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এভাবে গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায় এবং শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকগণ হেঁটে যাতায়াতে আগ্রহী হন না। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।
চরম বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১,৭৫,০০০ মানুষ মারা যায়। শুধু তাই নয়, বায়ুদূষণের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার, শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন জটিল রোগের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিও বেড়ে চলেছে। বিশ্বে যানবাহন থেকে ২৫% কার্বন নির্গমন হয়, যা জলবায়ু বিপর্যয়কেও তরান্বিত করছে। হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াত বায়ু ও শব্দদূষণ, জ্বালানী ব্যয় কমানোর পাশাপাশি যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করবে। সেই সাথে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রমের চাহিদা পূরণ সম্ভব তাই অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিও হ্রাস পাবে। ঢাকা শহরের সাসটেইনেবেল আরবান ট্রান্সপোর্টেশন ইনডেক্স অনুযায়ী, শহরের মোট ট্রিপের ১৭.৭% স্কুল ট্রিপ। এ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ট্রিপ পায়ে হেঁটে ও সাইকেলে সংঘটিত করার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর লক্ষ্যনীয় পরিবর্তন সম্ভব। ১১ নভেম্বর ২০২১ সকাল ১১.০০টায় রূপনগর পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, এ্যাস্ট্রাজেনেকা ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে রূপনগর পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের সম্মুখে “অসংক্রামক রোগ হ্রাসে বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ চাই” শীর্ষক মানববন্ধনে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
মানববন্ধনে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা নাঈমা আকতার বলেন, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৬৭% এর কারণ অসংক্রামক রোগ। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বেশি। নিয়মিত বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে খুব সহজেই শারীরিক পরিশ্রমের চাহিদা পূরণ সম্ভব। ভাঙ্গা ফুটপাত, সমতলে পারাপারের সুযোগ না থাকা, গাড়ির গতি ইত্যাদি কারণে শিক্ষার্থীরা হেঁটে যাতায়াতে নিরুৎসাহিত হয়। সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিদ্যালয়ে নিরাপদে হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ নিশ্চিতে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ এম এ মান্নান মনির বলেন, সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক শ্রম প্রয়োজন। আমাদের শহরে পর্যাপ্ত মাঠ-পার্ক নেই ফলে শিশুরা শারীরিক পরিশ্রম ও সামাজিকীকরণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে একদিকে যেমন শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত হবে তেমনি গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে আনার মাধ্যমে কার্বন নির্গমনের পরিমাণও কমে যাবে। পরিবেশ দূষণের পরিমাণ কমে গেলে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল অসংক্রামক রোগের মাত্রাও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
রূপনগর পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ এর প্রধান শিক্ষক এস এম তুহিন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থী হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। বিদ্যালয়ের সম্মুখে ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ির অতিরিক্ত গতি, হর্ন, সমতলে রাস্তা পারাপারের সুব্যবস্থা না থাকা ইত্যাদি কারণে তাদের নানাবিধ সমস্যা এমনকি দুর্ঘটনারও মুখোমুখি হতে হয়। শিশুদের জন্য নিরাপদে হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ নিশ্চিত হলে প্রতিটি নগরবাসীই উপকৃত হবেন। আজকের কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা হেঁটে যাতায়াতের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আয়োজনে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে হেঁটের যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, অযথা হর্ণ না বাজানো, পর্যাপ্ত ফুটপাত তৈরি ও রক্ষনাবেক্ষণ, সমতলে রাস্তা পারাপারে জেব্রা ক্রসিং, পথচারী পারাপার সাইন, পাবলিক টয়লেট, অবৈধ পার্কিং বন্ধ এবং পথচারীদের জন্য বসার ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি তুলে ধরে।
অনুষ্ঠানে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান-এর সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর কর্মকর্তাগণ এবং রূপনগর পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।