জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর ওয়ার্ল্ড সিটিস ডে হিসেবে পালন করা হয়। টেকসই নগরায়নের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশে^র বিভিন্ন দেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ওয়ার্ল্ড সিটিস ডে উদযাপন করে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে“ Adapting Cities for Climate Resilience ”। অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং নগরাঞ্চলকে ঘিরে সকল ধরণের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সংঘটিত হওয়ায় বিভিন্ন ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, যেমন- যানজট, দূষণ, জলাশয়, মাঠ-পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান দখল হয়ে যাওয়া, কার্বন নি:সরণ বৃদ্ধি ইত্যাদি। গত ২০ বছরে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। নগর এলাকার তাপমাত্রা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে মাঠ-পার্ক-উন্মুক্ত পরিসর ও সবুজ পরিসর সংরক্ষণ ও নতুনভাবে তৈরি করা; নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়গুলোকে সংরক্ষণ ও প্রয়োজনে নতুন জলাধার সৃষ্টি; যাতায়াত পরিকল্পনায় যান্ত্রিক যানের পরিবর্তে হেঁটে যাতায়াত ও অযান্ত্রিক যানবাহন, যেমন রিকশা ও সাইকেলকে প্রাধান্য দেয়া; দূরবর্তী যাতায়াতের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহনের ব্যবহার কমিয়ে এনে রেল ও নৌ নেটওয়ার্কবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলা; এলাকা ভিত্তিক পরিত্যক্ত ও অব্যবহৃত স্থানে ছোট সামাজিকীকরণের স্থান বা পকেট পার্ক গড়ে তোলা; ছাদবাগান, ছাদ কৃষি, নগর কৃষি ও সবুজায়নকে উৎসাহ প্রদান করাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। ৩১ অক্টোবর, রবিবার ২০২১, সকাল ১১.০০ টায় ধানমন্ডি ২৭ নম্বর মোড়ে (বাংলাদেশ আই হসপিটালের বিপরীতে) ওয়ার্ল্ড সিটিস ডে উপলক্ষ্যে ওয়ার্ক পর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টসহ ৯ টি প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত “শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে জলাশয়, মাঠ-পার্ক ও উন্মুক্তস্থান সংরক্ষণ” শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
ঢাকা আইডিয়াল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ এম.এ.মান্নান মনির বলেন, জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাব আমরা দৈনন্দিন জীবনে উপলব্ধি করতে পারছি। সচেতনতার অভাব জনজীবনের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। শহরের প্রতি নিজেদের দায়িত্ববোধ থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতে উৎসাহিত করার মাধ্যমে কার্বন নি:সরণ হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা সম্ভব।
হিউম্যান রাইটস ডিস্যাবিলিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর সাধারণ সম্পাদক শাহানা আক্তার বলেন, বর্তমানে নগরে শিশুদের খেলার জায়গার অপ্রতুলতা রয়েছে যা তাদের যথাযথ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের পথে অন্তরায়। শিশুদের জন্য উন্মুক্ত স্থান বৃদ্ধিসহ পর্যাপ্ত খেলার জায়গা তৈরি না করা হলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হবে। তিনি কর্মসূচি থেকে সরকারের কাছে শহরে উন্মুক্ত ও দূষণমুক্ত অঞ্চল বৃদ্ধির জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্ববান জানান।
রায়ের বাজার স্কুলের সহকারি শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দিন দিন তাপমাত্রা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা জনজীবনের জন্য হুমকিস্বরুপ। আমাদের শহরের মধ্য দিয়েও একাধিক নদী বয়ে গেছে। এছাড়া রয়েছে অসংখ্য খাল, যা নগরের বাতাসকে শীতল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নদী ও খালসমূহ অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার করে তা রক্ষণাবেক্ষণের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে নগরের বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
ছায়াতল বাংলাদেশের সেচ্ছাসেবক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, শহরে সবুজায়ন, মাঠ-পার্ক বৃদ্ধি, জলাধার রক্ষা, দূষণ রোধসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে শহরের বসবাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব সেসকল কাজের প্রতি আমাদের আরো যত্নশীল হতে হবে। ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এর পলিসি অফিসার আ ন ম মাছুম বিল্লাহ ভুঞা বলেন, শহরের রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় শব্দ ও বায়ুদূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক।
সভাপতির বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, নগরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে সবুজ পরিসর বৃদ্ধি, যাতায়াতে হাঁটা, সাইকেল ও রিকশাকে প্রাধান্য দেয়া, নদী ও খাল রক্ষায় আমাদের গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসই পারে আমাদের শহরকে বাসযোগ্য করে তুলতে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা মো আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইউথ ক্লাইমেট নেটওয়ার্ক, হিউম্যান রাইটস ডিস্যাবিলিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ, কারফ্রি সিটিস এলায়েন্স, স্টপ এমিশনস নাও বাংলাদেশ, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ স্কুল, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, ছায়াতল বাংলাদেশ এর প্রতিনিধিবৃন্দ।