English | Bangla
ভ্রাম্যমান খাদ্য বিক্রেতাদের প্রশিক্ষণ-নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বিক্রয়ে প্রত্যয় ব্যক্ত ভ্রাম্যমান খাদ্য বিক্রেতাদের

স্ট্রীটফুড ভেন্ডর বা ভ্রাম্যমান খাদ্য বিক্রেতাদের কাছ থেকে খাবার কিনে খাননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। কেউ যেমন শখের বশে বিভিন্ন রকম মুখরোচক খাবার তাদের কাছ থেকে ক্রয় করেন আবার অনেকে ভ্রাম্যমান খাদ্য বিক্রেতাদের উপর নির্ভর করেন তাদের প্রতিদিনকার বাজারের জন্য। কিন্তু অনেক ভ্রাম্যমান খাদ্য বিক্রেতাদের মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাদ্য দ্রব্য বিক্রির ক্ষেত্রে দুর্বলতা দেখাযায়। ফলে নগরবাসীর জন্য খাদ্যঝুঁকি তৈরি হয়। শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হয় ডায়রিয়া বা কলেরায় আক্রান্তহয়ে। যার অন্যতম কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর খাদ্য বা পানীয়। নগরবাসীর স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিয়ে ভ্রাম্যমানখাদ্য বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার বিক্রির প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা ও তারা সঠিকভাবে খাবার বিক্রয় করছে কিনা সে বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করা প্রয়োজন।
 
এ বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থা ‘ঢাকা ফুড সিস্টেম’ প্রকল্পের আওতায় তিন মাস মেয়াদী একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫ নং ওয়ার্ডের ভাসানী রোডের ১০০ জন ফুড ভেন্ডরের একটি ডাটাবেস তৈরি করা হয়েছে এবং তাদের স্বাস্থ্যবিধি-খাদ্যের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা বিষয়ে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা কর্তৃক যৌথভাবে গৃহীত একটি উদ্যোগ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট কার্যক্রমটি বাস্তবায়নে সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে। আজ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ সকাল ১০.৩০ টায় ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থা এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত ‘নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বিক্রয় সংক্রান্ত ভ্রাম্যমান খাদ্য বিক্রেতাদের প্রশিক্ষণ’ আয়োজনে বক্তারা এ কথাবলেন। 
 
জয়নাল আবেদীন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বলেন, আমরা ভ্রাম্যমান খাদ্য বিক্রেতাদের একটি ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসতে কাজ করছি। ভ্রাম্যমান খাদ্য বিক্রেতাদের কোন ডাটাবেস না থাকায় আপনাদেও আমরা চাইলেও প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে পারছিনা। আমরা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাথে কাজ করছি যাতে আপনাদেও একটি লাইসেন্সের আওতায় আনা যায়। এর মাধ্যমে আপনাদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাবার প্রস্তুতের জন্য প্রশিক্ষনের আওতায় আনা যাবে এবং আপনাদেও ব্যবসা থেকে উচ্ছেদ হতে হবে না।
 
বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. আবদুল আলীম, বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটির সদস্য বলেন, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাবার তৈরির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধওে বলেন, খাবারে জীবাণু সংক্রমণ হলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে এবং আপনাদের কাছ থেকে খাবার কিনে খেতে চাইবেনা। ফলে আপনাদের ব্যবসার ক্ষতি হবে। আপনাদের ছোট ব্যবসা হলেও দায়িত্ব অনেক। কাজেই আপনাদেও ব্যবসার স্থানের চারপাশ পরিষ্কার রাখা, সঠিক তাপমাত্রায় খাবার রান্না করা, ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে খাবার সংরক্ষণ করা, রান্নায় ব্যবহৃত সকল উপকরণ পরিষ্কার রাখা ইত্যাদি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।
 
জন টেইলর, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার চীফ টেকনিক্যাল এডভাইজার বলেন, আপনারা গড়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০০ মানুষের কাছে খাবার বিক্রি করেন। আপনারা নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাবার বিক্রির মাধ্যমে তাদের সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। আপনারা যখন পরিচ্ছন্ন উপায়ে খাবার রান্না ও বিক্রি করবেন তখন এলাকাবাসী নিরাপদ বোধ করবেন। আমরা শুধুমাত্র আপনাদের ক্রেতা নয়, আপনাদেরও সুস্থতা চাই। তাই আমরা এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছি। 
 
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান এর সঞ্চালনয় প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ দেন সংস্থার প্রকল্প কর্মকর্তা নাঈমা আকতার। তিনি খাবাওে জীবাণূ সংক্রমণ রোধে করণীয় বিভিন্ন বিষয় ভ্রাম্যমান খাদ্য বিক্রেতাদের মাঝে তুলে ধরেন। খাবার বিক্রির জায়গা পরিষ্কার রাখা, পোকা-মাকড় দমনের জন্য প্রয়োজনীয় ও সরকার অনুমোদিত ওষুধ-কীটনাশক ব্যবহার করা, ক্ষতিকর রং ও নি¤œমানের পণ্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকা, সকল উপকরণ, বাসনপত্র, মোছামুছির কাপড় সব পরিষ্কার রাখা, ডিটারজেন্ট ও গরম পানি ব্যবহার করে বাসনপত্র পরিষ্কার করা ইত্যাদি বিষয়গুলোর উপর তিনি জোর দেন। পাশাপাশি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার জন্য করণীয়গুলো গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেন। 
 
প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ভাসানী রোডের ভ্রাম্যমান খাদ্য বিক্রেতাগণ অংশগ্রহণ করেন। তারা প্রশিক্ষণ শেষে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাবার বিক্রি করবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। কর্মশালা শেষে সকল অংশগ্রহণকারীকে মাস্ক ও ময়লা ফেলার জন্য ঝুড়ি উপহার দেয়া হয়।