![](/clock_uploads/images/New Bitmap Image (3).bmp)
ঢাকা শহরে মানুষের অবসর যাপন এবং বিনোদনের জন্য তেমন কোন উম্মুক্ত স্থান চোখে পড়ে না। শিশুরা বাহিরে গিয়ে খেলার জায়গা পায় না। ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধির কারণে রাস্তায় পার্কিং সুবিধা দিতে গিয়ে নাগরিকদের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর মত জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এখন ইচ্ছে করলেও বড় পার্ক বা খেলার মাঠ তৈরি করতে হয়তো পারবে না। পার্কিং এর কারণে যে স্থানটি দখল হয়ে থাকে সে স্থানটিতে সাময়িক সময়ের জন্য পার্কলেট (সামাজিকীকরণের ক্ষুদ্র জায়গা) তৈরির মাধ্যমে সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার, সকাল ১১.৩০টায় প্রত্যাশা সামাজিক উনড়বয়ন সংস্থা, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ, কার ফ্রি সিটিস এলাইন্স ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ এর যৌথ আয়োজনে “সামাজিকিকরনের সুযোগ সৃষ্টিতে পার্কলেটের গুরুত্ব” শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিমক ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য ‘পার্কলেট’ হলো পার্কিংয়ের স্থানে ছোট বিনোদনকেন্দ্র। সড়কের পাশে, বাড়ির বর্ধিত অংশে ও মার্কেটের পার্কিংয়ের জায়গায় এই ছোট পার্ক (পার্কলেট) গড়ে তোলা যায়। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো শহরে প্রথম পার্কলেট কর্মসূচী শুরু হয়। বর্তমানে সান ফ্রান্সিসকোর এই উদাহারন গ্রহন করে পৃথিবীর অন্যান্য শহরেও পার্কলেট গড়ে উঠছে। ২০১৫ সালে থেকে দি ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিয়িং উদ্যোগে ঢাকায় সাতটি ও চট্রগ্রামে একটি পার্কলেট প্রদর্শন করে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হেল্থ ব্রীজ ফাউন্ডেশন অব কানাডার আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পৌর সভার মেয়র জনাব জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ মিঠুন এর সঞ্চালনায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর প্ল্যানার হামিদুল হাসান নবীন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির স্থপতি ও উদ্যানতত্ত্ববিদ এবং লেকচারার (স্থাপত্য বিভাগ) আলিয়া শাহেদ এবং প্রত্যাশা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো: বিল্লাল হেসেন।
দেবরা ইফরইমসন বলেন, আমরা গাড়ির জন্য পার্কিংয়ের স্থান দিতে গিয়ে বিনোদন ও শিশুদের খেলার জায়গা নষ্ট করছি। শহরে শিশুরা খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পাচ্ছে না। ফলে শিশুদের সুস্থ মানসিক বিকাশ হচ্ছে না। শিশুদের সামাজিকীকরন ও বিনোদনের জন্য শহরগুলোতে প্রচুর পরিমাণ পার্কলেট গড়ে তুলতে হবে। জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন বলেন, আমাদের জীবন আচরণই আমাদের পরিবেশ ধ্বংসের জন্য দায়ী। চুয়াডাঙ্গাতে একটি নদী রয়েছে মাথা ‘ভাঙ্গা’ নদীটি বাঁচাতে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম গ্রহন করা হচ্ছে। তবে নগরকে বসবাসযোগ্য করতে হলে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন। পার্কলেট একটি যুগোপযোগী ধারনা এবং চুয়াডাঙ্গা শহরে এটির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এসকল উদ্যোগ গ্রহনের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গাকে একটি আদর্শ জেলা হিসেবে গড়ে তুলবো।
গাউস পিয়ারী বলেন, আমাদের যাতায়াত ব্যবস্থা, সামাজিকীকরণ এবং জনস্বাস্থ্য বজায় রেখেই আমাদের নগর পরিকল্পনা করতে হবে। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, সামাজিক উন্নয়নকেও প্রাধান্য দিতে হবে। তা নাহলে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারবো না।
হামিদুল হাসান নবীন বলেন, আমাদেরকে বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন জায়গা ব্যবহারের দিকে। শিশুদের জন্য খেলার স্থানের কথা বিবেচনা করে নগর পরিকল্পনা করা উচিত। পলিসি লেবেলে পার্কলেটের মতো ধারনাগুলোকে বাস্তাবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। আলিয়া শাহেদ বলেন, স্থায়ী পার্কলেট বা মিনি পার্ক যে শুধুমাত্র শিশুদের খেলার স্থান বা বিনোদনের স্থান হিসেবে বিবেচিত হয় তা কিন্তু নয়। সেখানে অন্যান্য প্রাণীরও আবির্ভাব ঘটে যেমন পার্কলেটে গাছ থাকলে গাছে পাখি, বাদুর, প্রজাপতি ইত্যাদি পতঙ্গও থাকে। তাই একটা পার্কলে থাকলে প্রানের উপস্থিতি ঘটে।
মো: বিল্লাল হেসেন বলেন, চুয়াডাঙ্গাকে একটি আর্দশ নগরী করে তুলতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। রাস্তায় চলাচলকৃত ক্লান্ত মানুষগুলো যেন একটু বসে বিশ্রাম নিতে পারে, পানি খাওয়া সুবিধা থাকে এলক্ষ্যে গড়ে তোলা হবে পার্কলেট।