সরকার ১০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে তামাকজাত দ্রব্যের উপর আহরিত ১% স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ তামাক নিয়ন্ত্রণে ব্যবহারের জন্য ২০১৭ সালে ‘স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতি’ মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। সারচার্জের অর্থ ব্যবহারে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল’র উদ্যোগে দীর্ঘদিন থেকে একটি প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিসিপি) নামক উক্ত নীতিমালাটি এখনও চুড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। ফলে তামাকের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও অন্যান্য ক্ষয়-ক্ষতি বৃদ্ধি পেলেও সহায়ক পলিসি ও সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি না থাকার কারণে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
‘এনটিসিপি’ প্রণয়নে বিগত দিনে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট তার সহযোগী সংগঠনসমূহকে সাথে নিয়ে উক্ত বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। ২০১৬ সাল হতে উক্ত বিষয়ে সভা/সেমিনার, এ্যাডভোকেসী মিটিং, অবস্থান কর্মসূচিসহ ধারাবাহিক কার্যক্রম পালন করা হচ্ছে। ৯ অক্টোবর ‘জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস-২০১৭’ পালনে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আলোচনা করেন বক্তারা। পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
৮ জুলাই ২০২১ ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনার আয়োজন করে বাটা। ওয়েবিনারে দ্রুত এনটিসিপি চূড়ান্তকরণ ও স্থানীয় সংগঠনসমূহকে যুক্ত করে তামাক নিয়ন্ত্রণ এগিয়ে নিতে করণীয় বিষয়ে আলোকপাত করেন আলোচকবৃন্দ। “এনটিসিসি’র মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স সক্রিয়করণে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়াও তামাক নিয়ন্ত্রণে অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি শীঘ্রই সুনির্দিষ্ট বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য) কাজী জেবুন্নেছা বেগম।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চূড়ান্ত করা অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে বর্তমানে বিভিন্ন কর্মসূচি চলমান রয়েছে, তার মধ্যে;
লেটার ক্যাম্পেইন: বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট সহযোগী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে লেটার ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে। ইতিমধ্যেই জোটের ১৪টি সংগঠন দ্রুত ‘এনটিসিপি’ চুড়ান্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি প্রেরণ করেছে।
ত্রৈমাসিক মুখপত্রে সংবাদ প্রকাশ: বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট তার ত্রৈমাসিক মুখপত্র ‘সমস্বর’ এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে প্রচার করে আসছে। নিউজলেটারটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/দপ্তর, জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন নীতি নির্ধারনী মহলে প্রেরণ করা হচ্ছে।
গণমাধ্যমে প্রবন্ধ প্রকাশ: জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে জোট সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রবন্ধ লিখছেন যা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণে এনপিসিপি প্রণয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে জোরালো ভূমিকা পালন করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা: জোট তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনটিসিপি বিষয়ে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে। একই বিষয়ে জোটের সহযোগি সদস্য সংগঠগুলোর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরস্বরে দাবীটি জোরালো করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট আশাবাদী, ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং তামাক নিয়ন্ত্রণে স্থায়ীত্বশীলতার জন্য ‘এনটিসিপি’ খসড়া নীতিটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থানের পেছনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থাগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেহেতু, তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের এ কর্মসূচিগুলোতে স্থানীয় তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোকে যুক্ত করে তাদের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্দোলন আরো বেগবান হবে।