English | Bangla
“তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী আইন ও নীতির সংশোধন জরুরী” - গবেষনা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা

জনগণের স্বাস্থ্য উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত প্রচলিত আইন ও নীতিতে স্বার্থনেষী কিছু গোষ্ঠী তাদের স্বার্থে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই গোষ্ঠিগুলোর মাঝে তামাক কোম্পানির অপতৎপরতা সবচেয়ে বেশি। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে তামাক নিয়ন্ত্রণকে আরো অধিক গুরুত্ব প্রদান এবং রাষ্ট্রে প্রচলিত অন্যান্য আইন ও নীতিতে তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এ ধরনের বিধানগুলো সংশোধনের মাধ্যমে যুগোপযোগী করা জরুরী। ১৮ জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১টায় রায়েরবাজারে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট আয়োজিত “তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতা সৃিষ্টকারী আইন ও নীতি সংক্রান্ত গবেষনা প্রতিবেদন প্রকাশ” অনুষ্ঠানে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। 
 
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, দি ইউনিয়ন এর কারিগরী পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের প্রোগ্রাম অফিসার ডা: ফরহাদুর রেজা, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, সিটিএফকে’র সিনিয়র পলিসি এডভাইজার আতাউর রহমান মাসুদ, ডাস এর উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বকুল। সভায় গবেষণা তথ্যেও আলোকে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান।
 
 মূল প্রবন্ধে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় বিদ্যমান ১১টি আইন ৭টি বিধি ও ২টি আদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন বিধান যুক্ত রয়েছে বলে গবেষণায় চিহ্নিত করা হয়। সরাসরি আইন নীতি ছাড়াও এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো তামাককে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে উৎসাহিত করছে। যার মধ্যে পাঠ্যপুস্তকে তামাককে অর্থকরী ফসল এবং সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে তামাকের স্ব-পক্ষের তথ্য উপস্থাপন উল্লেখযোগ্য। তামাক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য হলেও মহামান্য রাষ্ট্রপতির (পারিশ্রমিক ও অধিকার) আইন, ১৯৭৫ আইনে মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাড়ির সদস্য বা তার অতিথি কর্তৃক গৃহিত হলে কোন দেশী তামাকের উপর কোন আবগারি শুল্ক আদায় করা হবে না বলে উল্লেখ রয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় সিগারেটের মতো ক্ষতিকর ও স্বাস্থ্যহানীকর দ্রব্য শুল্কবিহীন প্রদানের বিধান বাতিল করা জরুরি। এ ধরনের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এ গবেষনায় উঠে এসেছে।
 
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর “তামাকমুক্ত বাংলাদেশ” গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল আরো শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের আইন ও নীতি সুরক্ষায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। 
 
আবু নাসের খান বলেন, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশী বিনিয়োগ অবশ্যই কাম্য। কিন্তু, বিদেশী বিনিয়োগের নামে যেন তামাকের মতো স্বাস্থ্যহানীকর পণ্যে উৎসাহ প্রদান না করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কিছু আইনে প্রত্যক্ষভাবে সমস্যা তৈরী না করলেও পরোক্ষভাবে তামাক কোম্পানিকে সুযোগ দেবার বিষয়টি রয়ে গেছে। রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যানেই এগুলোকে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সহায়ক ও যুগোপযোগী করা প্রয়োজন।
 
এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ১৯৯০ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আইন প্রণয়নের মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু, তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের কারণে এটি সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এ ঘটনার ১৫ বছর পর বাংলাদেশে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সকল তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়। তবে এ দীর্ঘ সময়ের মাঝে হাজার হাজার তরুণকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ধূমপানে আকৃষ্ট করার সুযোগ পেয়েছে কোম্পানিগুলো। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক কোম্পানিগুলোর এ ধরনের সুযোগ বন্ধ করা জরুরী। 
 
ডা: ফরহাদুর রেজা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল’র উদ্যোগে কার্যক্রম চলছে। এ সময়ে দেশের অন্যান্য আইন, নীতিসমূহের নির্দিষ্ট কিছু বিষয় তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে যা চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষনা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌছে দেওয়া জরুরী। আশা করি, গবেষনালব্ধ তথ্য দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ কাজ এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। 
 
হেলাল আহমেদ বলেন, তামাকের মতো স্বাস্থ্যহানীকর পণ্য নিয়ন্ত্রণে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার এবং প্রতিনিধিত্ব প্রত্যাহার, তামাক কোম্পনি আয়োজিত কর্মসূচিতে সরকারী কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ ও কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে সরকারী কর্মকর্তাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ থাকা প্রয়োজন।
 
আতিউর রহমান মাসুদ বলেন, দেশে তামাক কোম্পানিগুলোর ব্যবসা দীর্ঘদিনের। অত্যন্ত পরিকল্পনা করে তারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন আইনে নিজেদের জন্য সুবিধা হতে পারে এ বিষয়গুলো অর্ন্তভুক্ত করেছে। বর্তমান সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত ইতিবাচক। আমরা প্রত্যাশা করি,, জনস্বাস্থ্য এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় বাস্তবায়নে আইন ও নীতিতে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূরীকরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।