মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ প্রত্যয় বাস্তবায়নে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন বন্ধে আইন বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়া হবে। ১৭ নভেম্বর, ২০২০ ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য অনুবিভাগ) কাজী জেবুন্নেছা বেগম বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছেন সে ঘোষণা বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতায় একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান এর সভাপতিত্বে এতে আলোচনা করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. নুরুন্নবী, ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. বেলাল হোসেন, দি ইউনিয়নের কারিগরী পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম প্রমূূখ। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলে’র প্রোগ্রাম অফিসার আমিনুল ইসলাম সুজন সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়-ঢাকা, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এবং দি ইউনিয়ন সমন্বিতভাবে সভা আয়োজন করে। সভাটি সঞ্চালনা করেন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচী ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান।
মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনটি বাস্তবায়নে আরো জোর দেওয়া প্রয়োজন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন কার্যক্রম অনেকটা গতিশীলতা পেয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তামাকের ভয়াবহতা রুখতে আমাদের প্রচারণা বন্ধে কাজ করতে। শীঘ্রই তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন বন্ধে আইন অনুসারে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কাজী জেবুন্নেছা বেগম বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার রোডম্যাপ হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মেকে রক্ষায় সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি তামাকের সহজলভ্যতা কমাতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্য করে তামাক কোম্পানিগুলো প্রচারনা চালাছে। তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন বন্ধে আরো জোরদারভাবে কাজ করার পাশাপাশি তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সম্মিলিতভাবে তৃণমূল পর্যায় থেকে কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে।
মো: নূর নবী বলেন, পার্বত্য এলাকায় তামাক চাষের ফলে পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে তামাক বিক্রি বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি আকাশ সংস্কৃতির যুগে ইন্টারনেটে আইন লংঘন করে প্রদান করা তামাক কোম্পানিগুলোর প্রচারনা রুখতে হবে।
ডা. মো. বেলাল হোসেন বলেন, তামাকের কোন প্রকার উপকারিতা নেই। শুধু স্বাস্থ্যগত ক্ষতি নয়, তামাক আমাদের পরিবেশ, কৃষি, অর্থনীতি সকল ক্ষেত্রেই বিপর্যয় নিয়ে আসে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি বয়সে তরুণ। তামাক কোম্পানিগুলো এই তরুণদের লক্ষ্য করে দীর্ঘ মেয়াদে তামাকের ভোক্তা তৈরীর করার জন্য আইন ভঙ্গ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রেস্তরাগুলোতে তামাক কোম্পানি আগ্রাসী প্রচারনা চালাছে। সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা অব্যহত রাখলেও তামাক কোম্পানিগুলো আইন লঙ্ঘণ করে জনগণকে তামাকজাত দ্রব্য সেবনে উদ্বুদ্ধ করে চলেছে। তাদের মুনাফার বলি হচ্ছে দেশের সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ ও নানান বয়সের জনগণ। “তামাকমুক্ত বাংলাদেশ” বাস্তবায়নে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরী।
হেলাল আহমেদ বলেন, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ট্রাসফোর্স কমিটিগুলোকে সচল করতে হবে। এ কমিটিগুলো তৃণমূলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে, মনিটরিংয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহন করেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ আমিনুর রহমান, ঢাকা রেঞ্চ এর সিনিয়র পুলিশ সুপার মোঃ আবুল বাশার তালুকদার, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব, মোঃ রাশিদুল করিম, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের সহকারী পরিচালক মোঃ মোখলেছুর রহমান, এইড ফাউন্ডেশন এর প্রকল্প পরিচালক (তামাক নিয়ন্ত্রণ) সাগুফতা সুলতানা, নাটাবের প্রকল্প ব্যবস্থাপক এ কে এম খলিল উল্লাহ, বাংলাদেশ গার্ল গাইডস এসোশিয়েশনের জুনিয়র ট্রেনার তিথি দে, টিসিআরসি এর কর্মসূচী ব্যবস্থাপক ফারহানা জামান লিজা। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জনের কার্যালয়-ঢাকা, ডিএমপি, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়-ঢাকা এর প্রতিনিধিবৃন্দ।