গত ১০ জুন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশেনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ওসমানী উদ্যানের উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিদর্শনকালে গাড়ি পার্কিং অবকাঠামো সম্প্রসারণের নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য এরকম একটি কেন্দ্রীয় উদ্যানের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়ণে সংশ্লিষ্ট অংশীজন এবং এর ব্যবহারকারীদের সম্পৃক্ত করা হয় নি। বরং কয়েক বছর যাবৎ এটি বন্ধ করে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হওয়ায় এর ব্যবহারকারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। বর্তমান মেয়র কর্পোরেশনের অনিয়ম দূর করার পাশাপাশি নগরীকে বাসযোগ্য করার জন্য কাজ করে চলেছেন। এমতবস্থায় ওসমানী উদ্যানসহ অন্যান্য মাঠ, পার্ক এবং সকল প্রকার উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়। এছাড়া পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতির স্বাথে ওসমানী উদ্যানের নীচে গাড়ি পর্কিং অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলসহ সকল প্রকার ক্ষতিকর স্থাপনা পরিহার এবং অবিলম্বে এর উন্নয়ন পরিকল্পনা জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে। ১৭ জুন ২০২০, সকাল ১১.০০ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি), ওসমানী উদ্যানের এগারো হাজার গাছ রক্ষা আন্দোলন, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টসহ মোট ২৫টি সংগঠনের সম্মিলিত আয়োজনে “ওসমানী উদ্যানে ক্ষতিকারক স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের” দাবি শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ঢাকা শহরে যে পরিমাণ গণপরিসর থাকার কথা তার ৯০ ভাগের ১ ভাগ আছে। এই যখন অবস্থা তখন বড় একটি উদ্যান ধ্বংস করে গাড়ি পার্কিং এর সিন্ধান্ত অপ্রত্যাশিত। কর্তৃপক্ষের উচিত জায়গা কিনে গণপরিসর তৈরি করা। যেন মানুষ ১৫ মিনিট হাঁটা দূরত্বে ছোট পরিসরে গণপরিসর তৈরি করতে হবে। ওসমানী উদ্যানের এগারো হাজার গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়কারী রহুল হোসেন প্রিন্স বলেন, ওসামানী উদ্যানে কয়েক বছর আছে ন্যাম ভবন তৈরির পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছিল। আমরা প্রতিহত করেছি। প্রতিবছর এই উদ্যান দখলের জন্য একশ্রেণীর মানুষ তৎপর হয়ে উঠে। পুরান ঢাকাবাসীসহ অনেকেই এই উদ্যানে হাঁটতে আসেন। ঢাকা শহরের এই ফুসফুস রক্ষা করতে হবে। পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষা করতে হবে।
স্টার্মফোর্ড ইউনিভাসিটি এর পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ওসমানী উদ্যানের উন্নয়নে পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব সমীক্ষা করা উচিত ছিল। সেটি করা হলে জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে । বুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, ইতিমধ্যে মেয়রের দুটো ভালো কাজ আমাদের আশার আলো দেছিয়েছে। তিনি শপথ গ্রহণের পর নিজ অফিস থেকে দূর্নীতিরোধে পদক্ষেপ নিয়েছে। তারপর তিনি নগরের গণপরিসর নিয়ে ভাবেন বলেই ওসামানী উদ্যান পরিদর্শন করেছেন। আমরা মনে করে ওসমানী উদ্যানে গাড়ি পার্কিং এর বিষয়ে মেয়রকে ভুল বুঝোনো হয়েছে। পার্কিং এর ব্যবস্থা না করে বরং ঐ এলাকা কার ফ্রি জোন করে গণপরিবহন জোন এবং অযান্ত্রিকযান বান্ধব হাব তৈরি করা হোক। সেই সাথে উদ্যানে কোন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের আগে তার ট্রান্সপোর্ট ইনপেক্ট এবং সাসটেন্টএবিলিটি সমীক্ষা করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, আমরা প্রায়ই একটি কথা বলি, যে গাছ কাটা হবে তার দ্বিগুন গাছ লাগানো হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষে বুঝেন না বিশাল আকৃতির গাছের ক্ষতি কোন কিছু দিয়েই পূরণ হয় না। এই ধরনের উদ্যোগে কর্তৃপক্ষের উচিত সাধারন মানুষের সাথে আলোচনা করা। এ ধরনের কর্মকান্ডে কর্তৃপক্ষ কখনই প্রশংসিত হবে না।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আমাদের শহরে এমনিতেই গণপরিসরের সংখ্যা অনেক কম। নতুন করে উদ্যান তৈরি করা সম্ভব নয়। যা আছে সেগুলোকে সংরক্ষণ করা উচিত। সারা বিশে^ এখন গাড়ি পার্কিংকে নিরুৎসাহি ত করা হচ্ছে। আর আমরা চলছি উল্টো পথে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশে শহরের প্রাণকেন্দ্রে পার্ক অথবা পিপলস্ স্কয়ার নামে একটি জায়গা বা পরিসর থাকে। যা সর্বসাধারণের অন্যতম মিলনকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। ওসমানী উদ্যান আমাদের কাছে তেমনই একটি স্পেস। সেন্টার ফর আরবান স্টডিজ এর নির্বাহী সদস্য ড. গোলাম মুর্তাজা বলেন, ওসমানী উদ্যান নিয়ে একশ্রেনীর স্বার্থন্বেষী মহল সব সময় তৎপর ছিল। এই উদ্যান রক্ষায় আমাদের এই একটি ট্রান্সফোর্স কমিটি গ্রহন করা প্রয়োজন। উদ্যানে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা করা হলে আমরা পরিবেশ ও সামাজিকভাবে যে ক্ষতিগ্রস্ত হব এই বিষয়ে মেয়রের কাছে তুলে ধরতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সম্পাদক মারুফ হোসেন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, শিক্ষাবিদ এম রাশেদা আক্তার, ওসমানী উদ্যান রক্ষা আন্দোলনের ফয়জুল হাকিম, সিডিপি এর খোকন সিকদার, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হোসেন, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এর ফারহানা জামান লিজা, শিক্ষক মান্নান মনির, স্টপ ইমিশন নাও মুভমেন্ট এর মঞ্জুরুল আহসান দিলু প্রমুখ।