বর্তমানে পৃথিবীর প্রতিটি দেশের মত বাংলাদেশও করোনা পরিস্থিতিতে পর্যুদস্ত। সাধারন মানুষের জীবন জীবিকার তাগিদে তুলে নেয়া হয়েছে সাধারণ ছুটি, স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে চলেছে জনজীবন। এ পরিস্থিতিতে নিরাপদ যাতায়াত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ঢাকা শহরে স্কুলে যাতায়াতের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৬০ লক্ষ ট্রিপ হয়। তাছাড়াও অফিস যাতায়াতের জন্য সংঘটিত প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ট্রিপের কথা আমাদের বিবেচনা করতে হবে। সীমিত গণপরিবহন এ বিশাল চাহিদা পুরণ করতে পারবে না। একারনে হাঁটা ও সাইকেল চালানোর সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আজ ৩০ মে ২০২০, দুপুর ১২.০০ টায় ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টর এর ফেসবুক পেইজে ‘করোনা পরিস্থিতিতে যাতায়াত ব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিৎ?’ শীর্ষক ফেসবুক লাইভ আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা এর যুগ্ম-সম্পাদক মারুফ হোসেন বলেন, অফিস খুলে যাওয়ার কারণে গণপরিবহন চালু করতে হচ্ছে। এজন্য আমরা কতটা প্রস্তুত তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। ঢাকা শহরের ৩ কোটি ট্রিপ সীমিত যানবাহন দিয়ে মোকাবেলা করা কঠিন হবে। এজন্য যাত্রী, শ্রমিক, মালিক সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে। গণপরিবহনের আসন বিন্যাস কিভাবে হবে, ভাড়া এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মত বিষয়গুলো কিভাবে নিশ্চিত করা হবে এবং কোন সংস্থা কিভাবে বিষয়গুলো মনিটরিং করবে এ বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনার প্রয়োজন ছিল। গণপরিহনের ফ্রিকুয়েন্সি বাড়াতে হবে। যেহেতু এ শহরের ৬০ শতাংশ মানুষ হেঁটে যাতায়াত করে তাদের জন্য ফুটপাতের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি অযান্ত্রিক যানকে প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় এর পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ড. রুহুল ফুরকান সিদ্দিক বলেন, যতদিন না করোনার ঔষধ আবিষ্কার হচ্ছে ততদিন আমাদের করোনার সাথেই বসবাস করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন ব্যবস্থা পরিচালনা করতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি গণপরিবহন শব্দ ব্যবহারের পরিবর্তে কর্মজীবি পরিবহন শব্দটি ব্যবহার করার সুপারিশ প্রদান করেন। পাশাপাশি শুধু গণপরিবহনে নয় বাসা, অফিস, বাজারে সকল জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আহ্বান জানান।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর উপদেষ্টা দেবরা ইফরইমসন বলেন, আমাদের সুস্থ্য এবং টেকসই যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। পূর্বের মত ব্যক্তিগত গাড়ি নির্ভর যাতায়াত ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি হাঁটা, সাইকেলকে প্রাধান্য দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তুলছে। এ পরিস্থিতিতে নারী, শিশু এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যাতায়াত ব্যবস্থার বিষয়টিও গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সভাপতি ড. আকতার মাহমুদ বলেন, আগামী দিনগুলো আমাদের আগের মত হবে না। করোনাকে সামনে রেখে আমাদের নতুন প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের ব্যক্তিগত অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। গণপরিবহনগুলা যদি অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করে তাহলে বাসের ঘাটতি কিভাবে মোকাবেলা করা হবে এ
বিষয়ে দিকনির্দেশনার প্রয়োজন ছিল। তিনি অফিস বাস চালু করা এবং ফুটপাতগুলো প্রতিবন্ধকতাহীন করার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি সাইকেলকে প্রাধান্য দিয়ে অবকাঠামো তৈরি করার কথা বলেন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান এর সঞ্চালনায় এ লাইভ আলোচনা সভাটি আয়োজিত হয়।