বর্তমানে ঢাকা শহরে মাত্র ৫% মানুষের ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে। এ অল্প সংখ্যক মানুষকে সুবিধা দিতে গিয়ে ৯৫% মানুষের যাতায়াতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি গাড়ি পার্কিং এর জন্য প্রায় ১২০ বর্গফুট জায়গা (এ্যাকসেস লেনসহ) প্রয়োজন। নূন্যতম দুটি পার্কিং হিসেবে ৩,৩০,৯৬৮টি গাড়ির ( বিআরটিএ এর জুলাই,২০১৯) জন্য প্রায় ৮ কোটি বর্গফুট জায়গা ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ এই বিশাল পরিমান জায়গায় ২৬ লক্ষ অফিস কর্মচারীদের স্থান বা ৫৩ লক্ষ মানুষের আবাসন বা ৯১ লক্ষ মানুষের কমিউনিটি সেন্টার বা ৫ কোটি মানুষের জন্য খেলার মাঠ বা অন্যান্য গণপরিসরের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পার্কিং চাহিদা ব্যবস্থাপনা করা হয়। কাজেই পার্কিং নীতিমালা ও সংশোধিত ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে হাঁটা, সাইকেল, অযান্ত্রিকযান ও গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে গুরুত্বারোপ করা আবশ্যক। ৮ মার্চ ২০২০, রবিবার সকাল ১১.০০ জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে ‘পার্কিং: বাস্তবমুখী পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ এবং আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি গাইবান্ধা-১ এর এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিগত গাড়ির বিলাসিতা অযৌক্তিক। অর্থনীতি এবং পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। পাশাপাশি ব্যাংক লোন বন্ধ, উচ্চ যানজট ফি ও এলাকা ভিত্তিক চার্জ আরোপ করা প্রয়োজন। গ্যাসের মত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ গাড়ির জন্য নষ্ট না করে উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহার করা হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আলোচনা সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নগর পরিকল্পনাবীদ মোঃ মুনতাসির মামুন। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের মিরপুর রোড, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ এবং সাত মসজিদ রোডে ব্যক্তিগত গাড়ি গড়ে রাস্তায় প্রায় ৬২% জায়গা দখল করে কিন্তু যাত্রী পরিবহন করে গড়ে মাত্র ২৩%। বিআরটিএ এর তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর গড়ে ১৩,৬৬৮টি ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধি পায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০৩৫ সাল নাগাদ যানবাহনের গতি কমে দাঁড়াবে ঘন্টায় ৪ কি:মি:।
বিআইপি এর সাধারন সম্পাদক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, সরকার বর্তমানে মেট্রোরেল ও সাবওয়ে এর মত গণপরিবহনে জোর দিচ্ছে। সে বিবেচনায় পার্কিং নীতিমালায় হাঁটা, সাইকেল ও গণপরিবহনকে প্রাধান্য দেয়ার কথা। আমাদের নীতিমালায় পথচারীদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। ঢাকা একটি ব্যতিক্রমী শহর। এ শহরের বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। অন্য মেগাসিটির পরিকল্পনা কপি করা হলে ঢাকা কখনোও বাসযোগ্য হবে না।
হেলথ্ ব্রীজ কানাডা এর আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন বলেন, বিশ্বের কোন শহরেই পার্কিংয়ের যোগান দিয়ে এর চাহিদা পূরণ সম্ভব হয়নি। তারা গাড়ি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পার্কিং ব্যবস্থাপনা করেছে। অনেক শহরে বায়ু দূষণ হলে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আর আমরা অযান্ত্রিকযানকে নিয়ন্ত্রণ করছি। হাঁটা দূরত্বে সকল পরিষেবা নিশ্চিত হলে গাড়ির ব্যবহার যেমন কমবে, তেমনি পার্কিং চাহিদা, দূষণ, যানজট ও দূর্ঘটনাও কমে আসবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন এর যুগ্ম সম্পাদক মারুফ হোসেন বলেন, ডিটিসিএ পার্কিং নীতিমালায় সড়কে বিশৃঙ্খলতা দূরীকরণে পার্কিং বৃদ্ধির দিকে জোর দিয়েছে। এর ফলে শহরের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তা বিবেচনায় নেয়া হয়নি। গাড়ির সংখ্যা বাড়বে এই ধারনা সামনে রেখেই আমরা নীতিমালা, পরিকল্পনা ও প্রকল্পে পার্কিং এর যোগানকে প্রাধান্য দিচ্ছি। এ ধারণা থেকে বের হয়ে এসে জনমূখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে যেমন পার্কিং এর জন্য জায়গার চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনই যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পার্কিং এর জন্য জায়গা বরাদ্দ না দিয়ে আবাসন, গণপরিসরের মত মৌলিক চাহিদা পূরণে যতœশীল হওয়া প্রয়োজন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান এর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএমপিসিএ এর সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, বাঁচতে শিখ নারীর ফিরোজা বেগম, বিসিএইচআরডি এর মাহবুবুল হক এবং কালের কন্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্র প্রমুখ।