বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই তরুণ, যাদের বয়স ১০-২৪ বছরের মধ্যে। দীর্ঘমেয়াদে তামাকের ভোক্তা তৈরীতে তামাক কোম্পানিগুলোর টার্গেট তরুণরা। দেশের তরুনদের তামাক সেবনে আসক্ত করে তোলার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারী কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি দূর্বল করতে নানানভাবে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়, রাজস্ব বোর্ড, অর্থ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত তামাক চাষ, তামাক কোম্পানির আয় হতে নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে রোডম্যাপ গ্রহণ করা। কোনভাবেই তামাক কোম্পানিগুলোর পক্ষ অবলম্বন করে তাদের সুবিধা দেয়া, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতির বিরোধীতা করা সমীচিন নয়।
২৮ অক্টোবর ২০১৯ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট আয়োজিত “তরুণদের রক্ষায় নীতিতে তামাক কোম্পানির প্রভাব বন্ধ করুন” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি নীতিতে তামাক কোম্পানির প্রভাব বন্ধে সরকারকে আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি এফসিটিসি-র আর্টিকেল ৫.৩ অনুসারে দ্রুত গাইডলাইন ও কোড অব কন্ডাক্ট প্রণয়ণেরও আহ্বান জানান তারা।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের উপদেষ্টা আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম, যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা, সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, ইপসা’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. নাজমুল হায়দার। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান ও সঞ্চালনা করেন আর্ক ফাউন্ডেশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল।
হেলাল আহমেদ বলেন, তামাক কোম্পানীগুলোর আচরণে মনে হয় তারা প্রধানমন্ত্রীর তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। তামাক কোম্পানীর বোর্ডে থাকার কারণে এবং কোম্পানিতে সরকারী কর্মকর্তাদের স্বজনদের চাকুরীর সুবাদে তামাক কোম্পানীগুলোর নীতিতে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থেকেই যাচ্ছে। এ অবস্থায় তামাক কোম্পানী হতে শেয়ার প্রত্যাহারের পূর্ব পর্যন্ত সরকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব, কাজের পরিধি এবং কার্যক্রমের সুষ্পষ্ট তথ্য সরকারের কাছে জমা দেয়া জরুরী।
এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, সরকার আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে “তামাকমুক্ত বাংলাদেশ” গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এমতাবস্থায়, তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার, তামাক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে সরকারি কর্মকর্তাদের রাখা, কৃষি মন্ত্রণালয়ে তামাক পাতার দাম নির্ধারনে কমিটি রাখা বা তামাক কোম্পানিগুলোকে কর সুবিধা প্রদানসংবিধানের সংশ্লিষ্ট বিধান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা এবং সরকারের নীতি ও কার্যক্রমের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। এ বিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে;
নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, সম্প্রতি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ এবং সংসদ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে প্রভাবিত করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদানের বিধানকে দূর্বল ও বিলম্বিত করা, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিএটি-র ব্যাটেল অব মাইন্ড নামক প্রতিযোগিতা আয়োজনসহ আইন বিরোধী নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে যুব-সমাজকে তামাকে আকৃষ্ট করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তামাক কোম্পানীগুলো।
সুশান্ত সিনহা বলেন, বিড়ির সম্পূরক্ত শুল্ক ৫ শতাংশ কমিয়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। তামাক কোম্পানিগুলোকে এভাবে সুযোগ প্রদান করা হলে এর নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বিগত অর্থ বছরে ২০০০ কোটি টাকার ট্যাক্স মওকুফ সুবিধা আদায়, খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিকে পাশ না করার জন্য বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফেকচার এসোসিয়েশন কর্তৃক, শিল্প, কৃষি, অর্থ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পত্র প্রদানসহ নানাভাবে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও খ-িত তথ্য উপস্থাপন করে তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়া বানচাল করতে ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা শুরু করেছে তামাক কোম্পানীগুলো।
আবু নাসের খান বলেন, তামাক কোম্পানীগুলো মূলত, তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন ও নীতি দূর্বল করে ফাঁয়দা লুঁটতে চায়। বাংলাদেশে তারা সম্প্রতি ই-সিগারেটের সম্প্রসারণে নানাবিধ বিভ্রান্তকর তথ্য প্রদাণ ও অপতৎপরতা শুরু করেছে। তাদের এ সকল অপচেষ্টাগুলোকে এখনই প্রতিরোধ করতে না পারলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের পদক্ষেপসমূহ ও এর বাস্তবায়ন মারাত্বকভাবে ব্যহত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নিম্নোক্ত সুপারিশ তুলে ধরা হয়;