কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ব্যবহার করে সিগারেট বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে জাপান টোব্যাকো কোম্পানি আইন ভঙ্গের পাাশাপাশি তরুণদের তামাক ব্যবহারে আকৃষ্ট করতে অপচেষ্টা শুরু করেছে। কোম্পানিরগুলোর এই অগ্রাসী কার্যক্রম সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের প্রতি চ্যালেঞ্জ। আইনভঙ্গ করে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রদানের দায়ে জাপান টোব্যাকো কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকারের আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। ৩০ মে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত ২১টি সংগঠনের আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এই দাবি জানানো হয়। এই প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে, একই দাবীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কাছে স্মারকলিপি প্রদন করা হয়। এর পাশাপাশি সারা দেশে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করে স্থানীয় তামাক বিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
বক্তারা বলেন, ‘জাপানিজ কোয়ালিটি’ স্লোগান বিক্রয় কর্মীদের পোশাক এবং ভ্যানগাড়ীতে কোম্পানির ব্রান্ড কালার ও লোগো ব্যবহার করছে জাপান টোব্যাকো কোম্পানি। এছাড়াও জাপান এক্সাটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের-র পরিবেশনায় নির্মিত অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রচার এবং সংশ্লিষ্ট ভিডিও বিভিন্ন ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছে। যা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘণ এবং শাস্তিযোগ্য আপরাধ। উক্ত আইনের ধারা-৫ ভঙ্গের প্রেক্ষিতে এক (১) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড এবং তিন (৩) মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, এ সময়ের জনপ্রিয় তরুণ অভিনেতা ও সঙ্গীত শিল্পী তাহসান তামাক কোম্পানির অর্থায়নে পরিচালিত এসকল কার্যক্রমে যুক্ত আছেন। অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, রাষ্ট্রের আইন লংঘন করে জনপ্রিয় একজন শিল্পীর এ ধরনের কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা তরুণ প্রজন্মকে তামাকজাত পণ্য সেবনে উদ্বুদ্ধ করবে। দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ও সঙ্গীত শিল্পীদের গণমানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকা প্রয়োজন। শিল্পী কর্মীদের জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোন পন্যের প্রসারে বা ব্রান্ড প্রমোশনে কাজ করা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাহসান খানকে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে এই কর্মকান্ড হতে নিজেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার আহবান জানানো হয়।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে অনতিবিলম্বে জাপান টোব্যাকোসহ সকল তামাক কোম্পানির প্রচারণা কার্যক্রম বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সংগঠনগুলো, অনতিবিলম্বে জাপান টোব্যাকোর প্রচার-প্রচারণা ও বিজ্ঞাপন বন্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা; প্রতিটি এলাকায় পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ডেলিভারি ভ্যানসহ নানাভাবে যে সকল বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে তা ৭ দিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ প্রদান করা; আইন লঙ্ঘন করে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচারে জাপান টোব্যাকো কোম্পানি, কোম্পানির এজেন্ট/ডিলার/স্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা দায়ের করা; তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লংঘনের প্রেক্ষিতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা এবং দ্বিতীয়বার একই অপরাধের ক্ষেত্রে আইন অনুসারে দ্বিগুণ জরিমানা নিশ্চিত করার দাবি জানায়।
কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, তাবিনাজ এর সমন্বয়কারী সাঈদা আখতার, দ্য ইউনিয়নে কারিগরি পরামর্শক সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর কান্ট্রি ম্যানেজার মোঃ নাসির উদ্দিন শেখ, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাকসুদ, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্ এর প্রোগ্রাম অফিসার আতিউর রহমান মাসুদ, নাটাবের প্রকল্প সমস্বয়কারী একেএম খলিলুল্লাহ, ইপসার প্রোগাম ম্যানেজার মো. নাজমুল হায়দার, ডাবিøউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান, অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদূল ইসলাম হিল্লোল, প্রজ্ঞার কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন, সুপ্র’র প্রকল্প সমন্বয়কারী মোহাম্মদ হাসনাইন, একাত্তর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডাঃ খালেদ শওকত আলী, ভয়েজ অব ইন্টারেকটিভ চয়েস এন্ড এমপাওয়ারমেন্ট এর হেড অব প্রোগ্রাম আজমল হোসেন, এইড ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ হাসিবুল হক, টিসিআরসি এর তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মহিউদ্দিন রাসেল, আহসানিয়া মিশনের অদুত রহমান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের আহমদ খাইরুল আবরার প্রমূখ।