তামাকের প্রকৃত মূল্য ও সুনির্দিষ্ট কর বৃদ্ধি তামাকের ব্যবহার কমাবে, সরকারের রাজস্ব বাড়াবে, দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় কমবে এবং আগামী দিনে সুস্থ্য সবল জাতি পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের বিদ্যমান কর ব্যবস্থায় তামাক কোম্পানিগুলো লাভবান হয়। কর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন, যাতে তামাক কোম্পানির লাভ বেড়ে না যায়। তামাক ব্যবহার কমাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে জাতীয় তামাক করনীতি প্রণয়ন করা জরুরি।
১১ মার্চ ২০১৯ ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে “তামাকের স্বাস্থ্য ক্ষতি রোধে তামাক কর নীতি প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
আলোচনা সভায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান এর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম, হেলথ রিপোটার্স ফোরামের সভাপতি তোফিক মারুফ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র পরিচালক গাউস পিয়ারী।
বক্তারা বলেন, তামাক খাত থেকে প্রাপ্ত ২৩ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে সরকারকে তামাকজনিত সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায় বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে দূর্বল কর ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে সরকারকে প্রচুর রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। তারা নানান অজুহাতে তামাকের কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের কারনে (হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়বেটিস) মৃত্যু ৬৭% এ এসে দাড়িয়েছে। ভয়াবহ এসকল রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে বহুলোক দরিদ্রতার শিকার হচ্ছে। আগামী দিনে সুস্থ্য সবল জাতি পেতে হলে তরুণ প্রজন্মকে তামাক হতে দুরে রাখতে হবে।
গবেষনার তথ্যানুসারে, “যত মানুষ তামাক ব্যবহার করেন তার অন্তত ৫০% মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করবে তামাকজনিত রোগে। এ সকল মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। যে কোন পণ্যের দাম বাড়ালে তার চাহিদা কমে। তামাকের প্রকৃত মূল্য ও কর বৃদ্ধি এবং যোগান কমানোর মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণে সাফল্য পাওয়া যায়। এই বাস্তবতায় তামাক নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন জরুরী। তামাক কোম্পানিগুলোর দাবি অনুসারে কর বৃদ্ধির উদার নীতি বা নমনীয়নীতি গ্রহণ করে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়।
তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রস্তাবনা;
সিগারেটের ক্ষেত্রে: নিম্ন স্তরের দেশীয় এবং বহুজাতিক ব্র্যান্ডের সিগারেটের ভিন্ন কর ব্যবস্থা তুলে নেওয়া, উচ্চ এবং মধ্যম স্তর একত্রিত করা, নিম্ন স্তরের সিগারেটের সর্বনিম্ন দাম প্রতি ১০ শলাকার সিগারেটের প্যাকেটের জন্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করা, নিম্ন স্তরে এড-ভেলোরেম কর ৬০% এ বৃদ্ধি করা, উচ্চস্তরের সিগারেটের সর্বনিম্ন দাম প্রতি ১০ শলাকার সিগারেটের প্যাকেটের জন্য ১০৫ টাকা নির্ধারণ করা, উচ্চস্তরে এড-ভেলোরেম কর ৬৫% এ বহাল রাখা, প্রতি দশ শলাকায় সিগারেটের প্যাকেটে ৫ টাকা হারে নির্দিষ্ট (স্পেসিফিক) কর আরোপ করা। বিড়ির ক্ষেত্রে: ফিল্টারড এবং নন-ফিল্টারড বিড়ির মধ্যকার পার্থক্য বাদ দেওয়া, প্রতি ২৫ শলাকার বিড়ির প্যাকেটের দাম সর্বনিম্ন ৩৫ টাকা নির্ধারন করা, এড-ভেলোরেম কর ৪৫% এ বৃদ্ধি করা, প্রতি ২৫ শলাকার প্যাকেটে ৬ টাকা হারে নির্দিষ্ট (স্পেসিফিক) কর আরোপ করা। ধোঁয়াবিহীন তামাকের ক্ষেত্রে: কর এর ভিত্তি পরিবর্তন করে খুচরা মূল্যে নির্ধারণ করা, সর্বনিম্ন প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার জন্য ৩৫ টাকা এবং নির্দিষ্ট (স্পেসিফিক) কর ৫ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম গুলের জন্য ২০ টাকা খুচরা মূল্য এবং নির্দিষ্ট (স্পেসিফিক) কর ৩ টাকা নির্ধারণ করা, এড-ভেলোরেম কর ৪৫% এ বৃদ্ধি করা। উল্লেখ যে বিদ্যমান আইন অনুসারে ১৫% ভ্যাট এবং ১ % হেলথ ডেভলাপমেন্ট সারচার্জ সকল তামাকজাত পণ্যের উপর বলবৎ থাকবে।
সভায় জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি, একলাব, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, বাংলাদেশ গার্ল গাইডস এসোসিয়েশন, ইন্সিটিউট অব ওয়েলবিয়িংসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহন করেন।