৭ জানুয়ারী ২০১৯ ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর উদ্যোগে ধানমন্ডিস্থ, রায়েরবাজার ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কৈবর্ত সভাকক্ষে “তামাক নিয়ন্ত্রণের বর্তমান অবস্থা ও করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় আবু নাসের খান, উপদেষ্টা বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) এবং চেয়ারম্যান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর সভাপত্বিতে বক্তব্য রাখেন নজরুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, আইয়ূবুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোট অথরিটি (বিআরটিএ) মুশফিকুর রহমান, সাবেক সিভিল সার্জন, ঢাকা জেলা, এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম, কারিগরি পরামর্শক, দি ইউনিয়ন, তাইফুর রহমান, সিনিয়র অফিসার, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস এন্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, গাউস পিয়ারী, পরিচালক, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট। সৈয়দা অনন্যা রহমান, প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ পাঠ করেন শারমিন আক্তার, প্রকল্প কর্মকর্তা ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট।
আবু নাসের খান বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো বিগত দিনে তাদের নিজস্ব ডকুমেন্টে স্বীকার করেছে তারা নানাভাবে সরকারের নীতিতে প্রভাব বিস্তার করে। জনস্বার্থ রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণে কাযকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে হলে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পঞ্চবাষিকী পরিকল্পনা চুড়ান্ত করতে হবে। সুুনিদিষ্ট পরিকল্পনা তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অজন আরো বাড়িয়ে দেবে।
গাউস পিয়ারী বলেন, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও এটি বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব আমাদের সবার। খুচরা সিগারেট ক্রয়-বিক্রয়ের ফলে সরকার রাজস্ব প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হচ্ছে এবং ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদানের উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে। তামাকজাত দ্রব্যের কার্টনগুলোতে আইন অনুসারে কোন ধরনের ছবিসহ স্বাস্থ্য সর্তকবাণী প্রদান করা হচ্ছে না এবং সিগারেট ছাড়াও কার্টনগুলোতে বিভিন্ন ধরনের পন্য পরিবহন করা হচ্ছে। তামাকের খুচরা বিক্রি বন্ধ করতে হবে এবং সিগারেটের কার্টনগুলোতেও সর্তকবাণী প্রদান করতে হবে।
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো শুধু জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্যই হুমকি নয়, তাদের কার্যক্রম আমাদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণের অঙ্গীকারকেও চ্যালেঞ্জ করছে। তামাক কোম্পানিগুলোর দাবি অনুসারে কর বৃদ্ধির উদার নীতি বা নমনীয়নীতি গ্রহণ করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। কর বৃদ্ধির পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ মেয়াদী কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তামাক নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পঞ্চবাষিকী পরিকল্পনা চুড়ান্তকরণ এবং সে অনুযায়ী তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
মুশফিকুর রহমান বলেন, তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সরকার জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করেছেন। সারাদেশে এ আইনটির বাস্তবায়ন জোরদার করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লংঘনকারী তামাক কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
তাইফুর রহমান বলেন, একসময় আমরা বৈদেশিক সহায়তার মুখাপেক্ষী ছিলাম। তামাকজাত দ্রব্যের উপর সারচার্জ আরোপের ফলে সে অবস্থা থেকে উত্তোরনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম অগ্রসর করতে সারচার্জে ও অর্থ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। তামাকের কর বৃদ্ধিও ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর সদিচ্ছা এবং এর প্রতিফলন থাকতে হবে।
নজরুল ইসলাম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের রূপরেখা, লক্ষ্য ঠিক রেখে সরকারী বেসকারী পর্যায় থেকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। বিগত দিনের অর্জন এবং আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ শেয়ার করে সরকারকে দোষারোপ করে নয় সহযোগী হয়ে আলোর পথ দেখাতে হবে। কোম্পানিগুলো কৃষকদের বিভ্রান্ত তথ্য দিয়ে তামাক চাষে প্রলুব্ধ করছে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। সরকারিভাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে।
আইয়ূবুর রহমান বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো যখন রাজস্বের যুক্তি দিয়ে কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করছে, ঠিক তখন বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের কারনে (হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়বেটিস) মৃত্যু ৬৭% এ এসে দাড়িয়েছে। ভয়াবহ এসকল রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে বহুলোক দরিদ্রতার শিকার হচ্ছে। এই বাস্তবতায় তামাক নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহনের পাশাপাশি গবেষনা ও মনিটরিং করা প্রয়োজন।
একলাব, এইড ফাউন্ডেশন, বাচঁতে শিখ নারী, ইপসা, সুপ্র, কারিতাস, সিএফএ, আইডাব্লিউবি, হিমু পরিবহন, বাংলাদেশ গালস গাইড এসোসিয়েশন, সুপ্র, প্রত্যাশা,নাটাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহন করেন।