তামাকমুক্ত বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তামাক কোম্পানীর হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ জরুরী।
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে অনেক অগ্রগতি সাধিত হলেও, অসংক্রামক রোগজনিত (হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়বেটিস) মৃত্যু আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। বর্তমানে মোট মৃত্যুর ৬৭% হয়ে থাকে অসংক্রামক রোগের কারণে। এ অবস্থায় তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে চাহিদা ও যোগান উভয় দিকেই সরকারের নজর দেয়া প্রয়োজন। তামাকমুক্ত দেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বর্তমান সময়ে তামাক কোম্পানীর হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ করা জরুরী।
জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে ০৯ অক্টোবর সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে “তামাকমুক্ত বাংলাদেশের লক্ষমাত্রা অর্জনে তামাক কোম্পানীর হস্তক্ষেপ” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
তামাক বিরোধী জোটের উপদেষ্টা আবু নাসের খানের সভাপত্বিতে সভায় বক্তব্য রাখেন, চলচিত্র ব্যক্তিত্ব ছটকু আহমেদ, জেষ্ঠ সাংবাদিক নিখিল ভদ্র, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটি’র সভাপতি আমির হাছান, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ। সভাটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের দাপ্তরিক সম্পাদক সৈয়দা অন্যনা রহমান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা শারমিন আক্তার।
আবু নাসের খান বলেন, কোম্পানীগুলো বেপরোয়া আগ্রাসন চালাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকারকে এখন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে তামাক কোম্পানিকে কোন ছাড় দেওয়া যাবে না। পাহাড়ে তামাক চাষ বন্ধ, কর ফাঁকিতে কোম্পানীগুলোর কঠোর শাস্তি, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সকল ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারনা বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহন, আইন নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তামাক কোম্পানীর হস্তক্ষেপ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ছটকু আহমেদ বলেন, চলচিত্র একটি অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। দীর্ঘদিন এই মাধ্যমে কাজ করার ফলে দেশ ও দর্শকদের প্রতি আমার অনেক দায়বদ্ধতা রয়েছে । আর তাই আগামীতে আমার চলচিত্রে কোন প্রকার ধূমপান সম্বলিত দৃশ্য প্রচার করব না।
হেলাল আহমেদ বলেন, তামাক কোম্পানীগুলো নানা ভাবে আইন অমান্য করে তাদের বিজ্ঞাপন চালিয়ে যাচ্ছে। তরুনদের আকৃষ্টি করতে বিশেষ করে এখন নাটক, সিনেমাকে ব্যবহার করছে। নাটক, সিনেমাগুলোতে বার বার ধূমপানের দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। তাছাড়া সিনেমায় প্রচারনা হিসেবে পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ডে ধূমপানের দৃশ্য সম্বলিত ছবি ব্যবহার করছে। নাটক, সিনেমার সাথে জড়িতদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা কোম্পানির ফাঁদে পা দিবেন না। আপনাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাই নাটক, সিনেমায় ধূমপানের দৃশ্য এড়িয়ে যাবেন।
নিখিল ভদ্র বলেন, সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। কিন্তু তামাক কোম্পানীতে সরকারের অংশিদারিত্ব রয়েছে। এই অংশিদারিত্ব থাকায় সরকারের ভিন্ন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা সরাসরি তামাক কোম্পানীর স্বার্থ রক্ষায় জড়িত। কোম্পানীগুলো তামাকের আগ্রাসনী ব্যবসা প্রসারে এই কর্মকর্তাদের ক্ষমতা অপব্যবহার করছে। তা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তাই অবিলম্বে তামাক কোম্পানী থেকে সরকারের অংশিদারিত্ব বাতিল করতে হবে।
আমির হাছান বলেন, তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো আমরা জানি। কিন্তু শুধু জেনে বা সচেতন হয়েই এর প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে তরুনদের আকৃষ্টি করতে কোম্পানীগুলো আগ্রাসনী প্রচারনা চালাচ্ছে। তাদের এই আগ্রাসন প্রতিরোধে সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে কঠোর হতে হবে।
জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে একটি মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধন ও মতবিনিময় সভায় মাস্তুল ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ গার্ল গাইডস এস্যোসিয়েশন, একলাব, অর্ক ফাউন্ডেশন, ব্যুরো অব ইকোনোমিক রিসার্স, ইপসা, এইড ফাউন্ডেশন, নাটাব, তাবিনাজ, টিসিআরসি, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং, মানব উন্নয়ন সংগঠন, বিসিসিপি, নারী প্রগতি সংগঠন, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), হিমু পরিবহন, সু-শাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র), নারীপক্ষ, নবনীতা মহিলা কল্যান সমিতি, বাঁচতে শিখো নারী, কারিতাস বাংলাদেশ, আই.আর.ডি, নাগরিক অধিকার সংরক্ষন ফোরাম, সোস্যাল শেল্টার, পিইউবি, গনমাধ্যম, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, সু-প্রভাত, ইকো সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।