সুস্থ্য জীবনের নিয়ামক স্বাস্থ্যকর খাবার। স্বাস্থ্যকর খাবারের সীমিত যোগান এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের লোভনীয় ও আগ্রাসী বিজ্ঞাপনের কারনে মানুষ এ সকল খাবারের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে মানুষের অসংক্রামক রোগ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যয়ও বাড়ছে। সুখী ও স্বাস্থ্যবান জীবন উপভোগ এবং অসংক্রামক রোগের প্রাদূর্ভাব হতে রক্ষা পেতে হলে অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জন করে স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ ও পর্যাপ্ত ব্যায়াম করতে হবে। পাশাপাশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর অস্বাস্থ্যকর খাবারের বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ০১ অক্টোবর ২০১৮ সকালে রায়েরবাজারে ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিয়িং, সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্সেস স্টাডিজ, ড্রিম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর যৌথ আয়োজনে বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবসকে রেখে ‘সুস্থ্য খাবার, সুস্থ্য জীবন’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
‘সুস্থ্য খাবার, সুস্থ্য জীবন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিয়িং এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক দবেরা ইফরইমসন। তনিি বলেন, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করতে হলে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবার ও বন্ধুদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে পারি। তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন যেভাবে বন্ধ করা সম্ভব হয়েছিল, ঠিক তেমনি মানুষকে সচেতন করে অস্বাস্থ্যকর খাবারের বিজ্ঞাপনও বন্ধ করা সম্ভব হবে। বহুজাতিক কোম্পানি গুলো আগ্রাসী ও বিভ্রান্তিমূলক বিজ্ঞাপনের প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে আকৃষ্ট করে থাকে। প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার বর্জন করে তাজা শাক-সব্জি, ফল-মূল উৎপাদন ও খাওয়ার মাধ্যমে আমরা স্থানীয় অর্থনীতিকে উন্নতি করতে পারি। সরকারের উচিৎ বহুজাতিক কোম্পানিকে সুবিধা না দিয়ে কৃষিখাতে পণ্য উৎপাদনের জন্য সহায়তা প্রদান করা। এর ফলে অংসক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জনসাধারণ সু-স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা পাবেন এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
সিএনআরএস এর কমিউনিকেশন ম্যানেজার নূর-ই-মাহবুবা বলনে এসডিজি অর্জন করতে হলে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা জরুরী। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য জনস্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং এর গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে প্রত্যেকেই সমাজ ও জাতীয় উন্নয়নে কাজ করে যেতে পারবো। তাই আমাদের নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্যকর খাবারের যোগান নিশ্চিত করতে হবে।
ড্রিম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা রাখিল খন্দকার বলনে আমাদের নিজেদের মাঝে সচেতনতা তৈরী করতে হবে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে তরুনদের এগিয়ে আসতে হবে। তরুন সমাজ এক সাথে কাজ করলে সমাজ ও দেশের উন্নতি ও পরিবর্তন সম্ভব। এরকম অনেক উদাহরণ তৈরি করেছেন বাংলাদেশের তরুনরা।
উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের ফলে মানুষের গড় অসুস্থতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির পথে অনেক বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসচেতনার কারনে মানুষ অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর খাবারের অপর্যাপ্ত যোগানও এক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী। সরকারের উচিৎ স্বাস্থ্যকর খাবারের পর্যাপ্ত যোগান নিশ্চিত এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের বিজ্ঞাপন বন্ধের পাশাপাশি এসকল খাবারের উপর স্বাস্থ্য উন্নয়ন কর আরোপ করা।
সভাপতির বক্তবে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট্র’র পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, আমাদের আচরনগত ঝুঁকি যেমন অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে শারীরকি ঝুঁকি যেমন উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছি। এজন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের যোগান যেমন বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নগরে ব্যায়াম বা শিশুসহ সকল বয়সী মানুষের জন্য খেলার মাঠ এবং উন্মুক্ত স্থান নিশ্চিত করতে হবে।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র প্রকল্প কর্মকতা শারমীন আক্তার এর সঞ্চালনায় সেমিনারে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।