English | Bangla
সকলের ব্যবহার উপযোগী করে বৈশাখী খেলার মাঠের নকশা প্রণয়ন
একটি শহরে পার্ক ও খেলার মাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু ঢাকা শহরের প্রতিটি কমিউনিটিতে পার্ক ও খেলার মাঠ সুনিশ্চিত হয়নি। আবার যে সকল এলাকায় মাঠ-পার্ক রয়েছে তাও এলাকাবাসী যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারেন না। একটি মাঠ তখনই সকলের জন্য ব্যবহার উপযোগী হবে, যখন তাতে সকলের চাহিদার প্রতিফলন থাকবে। রায়েরবাজার ৩৪ নং ওয়ার্ডের বৈশাখী খেলার মাঠটিকে সকলের জন্য ব্যবহার উপযোগী করে তৈরির জন্য মাইনক্র্যাফ্ট খেলার মাধ্যমে এলাকাবাসী নকশা প্রণয়ন করেছেন। হেল্থব্রিজ-কানাডা, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, ব্লক বাই ব্লক এবং ইউএনহ্যাবিটেট এর সম্মিলিতভাবে শিশুবান্ধব রায়েরবাজার খেলার মাঠ তৈরির লক্ষ্যে আয়োজিত কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীগণ একাধিক নকশা প্রণয়ন করেন। এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে সকলের জন্য ব্যবহার উপযোগী মাঠের নকশা তৈরির এ উদ্যোগ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ এলাকাবাসীই জানেন যে কিভাবে মাঠের যথাযথ উন্নয়ন, ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব। ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর কৈবর্ত সভাকক্ষে তিন দিনব্যাপী কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।  
 
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীগণ ছয়টি ভাগে বিভক্ত হয়ে মাইনক্র্যাফ্ট খেলার মাধ্যমে ছয়টি ভিন্ন নকশা প্রণয়ন করেন। কর্মশালার শেষ দিনে সকল গ্রুপ তাদের নিজস্ব নকশা উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবিত সকল উপাদানের মধ্য থেকে অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য তিনটি সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চিহ্নিত করা হয়। যেখানে র‌্যাঙ্কিং এর মাধ্যমে ক্রমানুসারে সকলের ব্যবহার উপযোগী গণশৌচাগার, শিশুদের পৃথক খেলার জায়গা এবং প্রশস্ত হাঁটার রাস্তা তৈরি করা এই তিনটি বিষয় অগ্রাধিকার  পায়। পাশাপাশি দেয়াল সরিয়ে গ্রিলের ব্যবস্থা করা যাতে বাইরে থেকে ভিতরের কর্মকান্ড দেখা যায়, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, আলোর ব্যবস্থা করা, নিরাপত্তা কর্মী ইত্যাদির মাধ্যমে মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিষয়টিও গুরুত্ব পায়। অনুষ্ঠানে শেষে সেরা তিনটি নকশা বাছাই করে বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেয়া হয়।
 
সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্স এর সাধারণ সম্পাদক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, শিশুদের খেলাধূলার অধিকার নগর পরিকল্পনার ব্যর্থতার কারণে অনেকটাই খর্ব হয়েছে। অংশগ্রহণমূলক নকশা প্রণয়ন করা অত্যন্ত প্রয়োজন কারণ এতে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকলের চাহিদার প্রতিফলন পরিকল্পনায় থাকে। বৈশাখী খেলার মাঠের পরিকল্পনা এলাকাবাসী করায় এ মাঠ দখল হওয়ার আশঙ্কা কম। 
ভিত্তি স্থপতি বৃন্দের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হাবিব বলেন, আমরা সকলের জন্য ব্যবহার উপযোগী গণপরিসর তৈরির চেষ্টা করছি। অন্তর্ভূক্তিমূলক এবং শিশুবান্ধব খেলার মাঠ তৈরির জন্য ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট অনেক দিন থেকে কাজ করছে। তাদের ও ইউএনহ্যাবিটেট এর প্রচেষ্টায় আজ মাইনক্র্যাফ্ট খেলার মাধ্যমে এত সুন্দর কিছু নকশা শিক্ষার্থীরা প্রণয়ন করেছে। তারা যা তৈরি করেছে, বড়রা হয়তো তা কখনো চিন্তাও করেন না। এ শিশুরাই ভবিষ্যতে সকলের জন্য উপযোগী একটি নগরব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবে। 
 
রায়ের বাজার হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান, হাসানুল হামিদ খান রুবেল বলেন, রায়ের বাজার বৈশাখী খেলার মাঠের উন্নয়নে যে নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে পাশে থাকবো। কারণ এর মাধ্যমে শিশুরা একটি সুন্দর পরিবেশে বেড়ে ওঠার নিশ্চয়তা পাবে। আমি প্রত্যাশা করি শুধু বৈশাখী নয়, সকল মাঠের উন্নয়নেই এলাকাবাসীর অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা হবে। 
 
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, তিন দিনের এ কর্মশালায় শিশুরা তাদের স্বপ্নের মাঠ তৈরির নকশা করেছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহার উপযোগী উপাদানসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদান তারা চিহ্নিত করেছে। মাঠ ও পার্কের নকশা অংশগ্রহণমূলক এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক হলে সকলের জন্য ব্যবহার উপযোগী হবে। এলাকাবাসী এবং এলাকার যারা নেতৃস্থানীয় আছেন তাদের এ মাঠের নকশা বাস্তবায়ন এবং মাঠের রক্ষণাবেক্ষণে এগিয়ে আসতে হবে। 
 
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ইউএনহ্যাবিটেট এর আঞ্চলিক সমন্বয়কারী এবং গণপরিসর বিশেষজ্ঞ সোহেল রানা, মাইনক্র্যাফট বিশেষজ্ঞ ইউহেনিও ইজাসটেলাম, এলাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাধারণ বাসিন্দা, স্থপতি, পরিকল্পনাবিদ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এবং ইনস্টিটিউট অফ ওয়েলবিং এর কর্মকর্তাবৃন্দ।