English | Bangla
আইনানুয়ায়ী রাত ১০টার পর অনুষ্ঠানের নামে শব্দদূষণ বন্ধের দাবি
শব্দ দূষণ চোখে দেখা যায় না। তাই এর ক্ষতিকর বিষয়টি আমরা উপেক্ষা করি। অথচ শব্দ দূষণ মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মারাতœক ক্ষতি সাধন করে। রাজধানী ঢাকায় এখন রাতের বেলা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে উচ্চ শব্দে গান বাজানো হয়। মাত্রাতিরিক্ত শব্দ শুধুমাত্র মানবজীবনেই নয়, জীববৈচিত্রের জন্যও ক্ষতিকর। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী অনুষ্ঠানে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যে কোন যন্ত্রপাতি দৈনিক ০৫ (পাঁচ) ঘন্টার বেশি সময়ব্যাপী ব্যবহারের অনুমতির বিধান নেই এবং অনুমোদিত সময়সীমা রাত ১০টা অতিক্রম করতে পারবে না। অথচ এই আইন প্রতিনিয়ত ঢাকা শহরে ভঙ্গ করা হচ্ছে। রাজধানীতে কর্মব্যস্ত জীবনে নাগরিকদের শান্ত-নিরিবিলি পরিবেশে ঘুম এবং বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য আইনানুযায়ী সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্তৃক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতন হওয়া দরকার। 
 
আজ ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার, সকাল ১১.০০ টায় পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম, বিসিএইচআরডি, পরিবেশ উদ্যোগ, ইএসএসডি, ফেনী স্টুডেন্টস ফোরাম অফ ঢাকা এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত “রাত ১০টার পর অনুষ্ঠানের নামে শব্দদূষণ বন্ধে সরকার কর্তৃক কার্যকর পদক্ষেপ চাই” শীর্ষক মানববন্ধনে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। 
 
মানববন্ধনের সূচনা বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে গান বাজানো হয়। যা আশের পাশের মানুষদের সমস্যা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষদের সমস্যাই বেশি হচ্ছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ এবং ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ২০০৮ এ স্পষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে। অথচ কেউ তা মানছে না। একক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে বিশেষ করে আইনশৃংখলা বাহিনীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির রেজিষ্ট্রার আব্দুল মতিন বলেন, একজন মানুষ সারাদিন কর্মব্যস্ত সময় পার করার পর রাতের বেলায় বিশ্রামের প্রযোজন রয়েছে। অথচ শব্দদূষণ এতটা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে যে, রাতে শান্তি মত বিশ্রাম নেয়া যায় না। বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং গাড়ির শব্দে ঘুমানো যায় না। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধারাবাহিক কাজ করতে হবে।  
 
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের একাডেমিক এ্যাডভাইজার প্রফেসর ড. গুলশান আরা লতিফ বলেন, আমাদের পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য শব্দদূষণ রোধের কোন বিকল্প নেই। শব্দদষণ শুধুমাত্র মানবজীবনেই নয়, জীববৈচিত্রের জন্যও ক্ষতিকর। আমরা সুন্দরবনে আনন্দ করতে গিয়ে শব্দদূষণ করছি। যা সুন্দরবনের প্রাণীর জন্যই ক্ষতিকর। এজন্য আমাদের সকলকে শব্দদূষণ রোধে সচেতন থাকতে হবে। নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, ঢাকা শহরে শব্দদূষণের মাত্রা এতটা বেড়েছে যে, রাতের বেলায় একজন পরিশ্রান্ত মানুষের বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ নেই। শুধু রাত ১০টা নয় ঢাকাবাসী বর্তমানে ২৪ ঘন্টা শব্দদূষনের মধ্যে বসবাস করছে। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ সম্পর্কে মানুষকে অবগত করতে হবে। আইনটির আরো প্রচারনার প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দিতে হবে। আমরা আনন্দ- উৎসব করতে গিয়ে আমাদের আশপাশের মানুষের ক্ষতি করতে পারি না। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সকলকে সুনাগরিকের পরিচয় দিতে হবে। 
 
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, শব্দদূষণ সৃষ্টি করে এমন যন্ত্রাংশ আমদানি এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। শব্দ দূষণের কারণে পুলিশ বাহিনীর ১০ থেকে ১২ শতাংশ পুলিশ শ্রবণজনিত সমস্যায় ভূগছেন। কাজেই আইন বাস্তবায়নে পুলিশ বাহিনীকে আরো বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। এ সরকার পরিবেশবান্ধব সরকার। পরিবেশ রক্ষায় এ সরকার অনেক আইন করেছেন। আমরা এখন সেই সকল আইনের বাস্তবায়ন দেখতে চাই।    
 
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান এর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্যদেন বিসিএইচআরডি এর নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল হক, কুষ্টিয়া সাফ এর নির্বাহী পরিচালক মীর আব্দুল রাজ্জাক, প্রত্যাশা জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন এর সাইফুল আলম। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী ডা. আনোয়ার হোসেন, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সহকারি অধ্যাপক ড. মাহমুদা পারভীন, প্রভাষক হুমায়ন কবির ও সাহাদত হোসেন, দি ইনস্টিটিউট অফ ওয়েলবিং এর বরনি ডালবত প্রমুখ।