ঢাকা শহরে স্কুলে আসা যাওয়ার সময়টিতে যানজট সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে শিশুদের হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত একটি সমাধান হতে পারে। এজন্য শিক্ষার্থীদের হেঁটে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। নিরাপদে হেঁটে স্কুলে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টির প্রক্রিয়ার সঙ্গে শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসীর সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। রিভাইজ ঢাকা ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে এলাকাবাসী এবং শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), শেলটেক এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে ‘নিরাপদে বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য’ ২ দিনব্যাপী কর্মশালা শেষে মতবিনিময় সভার আয়োজন আয়োজন করা হয়।
উক্ত কর্মশালায় রায়েরবাজার এলাকার ৫টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন। দুই দিনব্যাপী এ কর্মশালায় শিক্ষার্থীবৃন্দকে মানচিত্র কি করে বুঝতে হয় তা শেখানো হয়। এছাড়া রাস্তায় হেঁটে যাতায়াতে তারা কি ধরণের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয় এবং কি সমাধান আশা করে সে বিষয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়গুলো কিভাবে তারা মানচিত্রে ফুিটয়ে তুলবে তা তাদের শেখানো হয়। পরবর্তীতে রায়েরবাজার এলাকার দুটি রাস্তায় হেঁটে যাতায়াতে বিভিন্ন সমস্যা ও এর সমাধানে তাদের প্রয়োজনীয়তা মানচিত্রে নকশার মাধ্যমে তুলে ধরে। শিক্ষার্থীগণ তাদের এলাকায় রাস্তায় ধরণ অনুযায়ী ৫ ধরনের সড়কের সুপারিশ তুলে ধরে। যেমন: এলাকার সকল রাস্তা একই রকম নয়। রাস্তার প্রশস্ততা এবং পারিপ¦ার্শিক অবস্থা বিবেচনা করে কিছু রাস্তায় শুধু পথচারীদের চলাচলের জন্য নির্ধারন করা, কিছু রাস্তা পথচারী এবং যানবাহন উভয় চলাচলের জন্য, কিছু রাস্তা সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা এবং কিছু রাস্তা পথচারী এবং অযান্ত্রিকযান চলাচলের ব্যবস্থা করা হলে এলাকালাবী এবং সর্বপরি শিক্ষার্থীদের হাঁটার পরিবেশ নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে।
মতবিনিময় সভায় , রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর পরিচালক নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, রিভাইজ ড্যাপে আমরা এলাকাভিত্তিক স্কুল নির্ধারণ করে দেয়ার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেখানে স্কুল আছে নতুন করে সেখানে আর স্কুলের অনুমোদন দেয়া হবে না। শিক্ষার্থীরা যেন হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করতে পারে সেজন্য তাদের প্রয়োজন কি? এ বিষয়ে অবহিত হওয়ার জন্যই আমাদের এই কর্মশালা। রায়ের বাজার এলাকায় আমরা পরীক্ষামুলক কার্যক্রম শুরু করবো। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম অজিয়র রহমান বলেন, ঢাকা শহরের হাঁটার পরিবেশ উন্নয়নে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। এলাকায় হাঁটার পরিবেশ ঠিক রাখতে সকল স্তরের মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এলাকাবাসী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।
নগর পরিকল্পনাবীদ নিয়াজ রহমান বলেন, এর আগেও শিক্ষার্থীদের নিয়ে বরিশালে খালের প্ল্যান করা হয়েছিল। আমরা চাচ্ছি রিভাইজ ড্যাপেও শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই কর্মশালার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে রায়েরবাজার এলাকার ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান করা হয়েছে। মতবিনিময় সভায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারি বলেন, স্কুলে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে শিশুরা প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রম পেতে পারে। এজন্য শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়মিত হেঁটে যাতায়াতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের নিরাপদে হাঁটার পরিবেশ তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। হাঁটার স্বাস্থ্যগত উপকারিতার পাশাপাশি পরিবেশ, অর্থনীতি এবং সামাজিক বিষয়গুলোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন এর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ মান্নান মনির, আলী হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জেরিন সুলতানা প্রমুখ।