জাতিসংঘের অন্তর্ভূক্ত মোট ১৯৩ টি দেশ কর্তৃক গত ১২ এপ্রিল ২০১৮ সাধারণ সভায় ৩ জুন বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাইসাইকেল পরিবেশবান্ধব, জ্বালানীমুক্ত, ভূমি সাশ্রয়ী, সুবিধাজনক ও দক্ষ বাহন। নিয়মিত সাইকেল চালানোর মাধ্যমে সুস্থতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ঢাকা শহরে বাইসাইকেলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নগরে বাইসাইকেলের প্রচলন বৃদ্ধি পেলে যানজট ও দূষণ সমস্য লাঘবে ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য সহায়ক নীতিমালা, পরিকল্পনা, অবকাঠামো এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সাইকেল ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান করা জরুরী। আজ ২ জুন সকাল ৯.০০ টায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ের দক্ষিণ প্লাজায় বিশ্ব বাইকেল দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বে এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), ইউএনডিপি বাংলাদেশ, বিডি সাইক্লিস্ট এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্বলিত উদ্যোগে “যানজট ও দূষণের অবসান, বাইসাইকেলে হোক সমাধান” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে দিবসটি উদযাপন করা হয়। উদযাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাইক্লিস্টগণ সপ্তাহে একদিন বাইসাইকেলে যাতায়াতের অঙ্গীকার করেন। এজন্য তারা একটি অঙ্গীকারের জন্য নির্দ্দিষ্ট একটি বোর্ডে স্বাক্ষর করেন। এরপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্ব শেষে বাইসাইকেল র্যালির মাধ্যমে দিবস উদযাপনের সমাপ্তি ঘটে। র্যালীতে প্রায় ৪০০ সাইক্লিস্ট উপস্থিত ছিলেন। সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মারুফ হোসেনের সঞ্চলনায় আলোচনা করেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক এবং বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) এর প্রকল্প পরিচালক পরিকল্পনাবিদ মোঃ আশরাফুল ইসলাম, প্রকল্প ব্যবস্থাপক হাসিবুল কবির এবং বিডিসাইক্লিস্ট এর মর্ডারেটর ফুয়াদ আহসান চৌধুরী।
আলোচকগণ বলেন, যানজট থেকে রেহাই পেতে অনেকেই বাইসাইকেলে যাতায়াত করছেন। কিন্তু বাইসাইকেল লেন, পার্কিং, ইত্যাদি সুবিধা না থাকায় সাইক্লিস্টদের নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি দূর্ভোগের শিকার হতে হয়। জাতীয় বহুমাধ্যমভিত্তিক পরিবহন নীতিমালা, ২০১৩ তে নগরে বাইসাইকেলের জন্য পৃথক লেনের নিশ্চিত করতে নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া প্যারিস চুক্তি মোতাবেক সরকার পরিবহন খাতে ২০৩০ সাল নাগাগ ২৪ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমাবেন বলে অঙ্গীকারবদ্ধ। নগর যাতায়াত ব্যবস্থায় বাইসাইকেলের ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে যান্ত্রিক যান বিশেষ করে প্রাইভেট কারের উপর কমানো গেলে সরকার সেই অঙ্গীকার পূরণে এক ধাপ এগিয়ে যাবেন। এজন্য পরিকল্পিতভাবে বাইসাইকেল রুট তৈরি এবং সরকারি বা বেসরকারি মালিকানাধীন সকল গণস্থাপনায় বাইসাইকেল স্ট্যান্ড এর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
আলোচকগণ আরো বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০১৬-২০৩৫) প্রণয়নের ক্ষেত্রে হাঁটা এবং বাইসাইকেলকে অগ্রাধিকার দেবে। পরিকল্পনায় বাইসাইকেল রুট এবং পার্কিং সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। এছাড়া রাজউক এর আওতাধীন এলাকায় নতুন আবাসন প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে হাঁটা এবং বাইসাইকেল এর সুযোগ থাকাটা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এছাড়াও ডিটিসিএ গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে বাইসাইকেলের সুবিধা নিশ্চিত করা হবে বলে জানান। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃক তাদের আওতাধীন এলাকায় একটি অংশে এ বছরই বাইসাইকেলের জন্য পৃথক লেন তৈরি করবে বলে জানা গেছে। ইউএনডিপি বাংলাদেশ উপস্থিত সকলের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
সবশেষে জাতিসংঘ কর্তৃক ৩ জুন বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস ঘোষণা করায় আয়োজক এবং উপস্থিত সাইক্লিস্টদের পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।